লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি-উপকূল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিন

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস কিছুই নেই, তবু উপকূলীয় ১০টি জেলার কয়েক শ গ্রাম তলিয়ে গেছে। কয়েক লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, জমির ফসল।
এসব কিসের আলামত? পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, খুলনা থেকে শুরু করে পূর্বে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় একই অবস্থা। সংস্কারের অভাবে উপকূল রক্ষা বাঁধ বা বেড়িবাঁধ বহু জায়গায় ভেঙে গেছে। এবারের পূর্ণিমায় জোয়ারের পানি কিছুটা অস্বাভাবিক রূপ নিয়েছিল। আর তাতেই ডুবে গেছে এত বিশাল এলাকা। মংলা শহরে কোমর-সমান পানিতে ডুবে আছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। বরগুনা শহর তো এখন নিয়মিত দুবেলা জোয়ারের পানিতে ডুবছে। এসব এলাকার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলের তো কথাই নেই।
১৯৯২ সালে সরকারি উদ্যোগে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি বেড়িবাঁধ আরো উঁচু ও পোক্ত করে বানানোর সুপারিশ করেছিল। ২১ বছরেও সে কাজটি হয়নি। সিডর ও আইলায় বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেগুলোর মেরামতকাজও এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে করা যায়নি। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতেও কিছু কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে উপকূলবাসীর জীবন এখন পুরোপুরি অরক্ষিতই বলা চলে। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। গত সপ্তাহে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রমেই এ উচ্চতা বাড়তে থাকবে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক উচ্চতাই বেড়ে যাবে ৫০ সেন্টিমিটারের বেশি। অথচ দক্ষিণের জেলাগুলোর একটি বড় অংশই রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর চেয়ে কম উচ্চতায়। এগুলো সবই স্থায়ীভাবে ডুবে যাবে। পাকিস্তান আমলে নির্মিত বর্তমান বেড়িবাঁধ যে উচ্চতায় রয়েছে, তাতে এ বাঁধ ক্রমেই অমাবস্যা-পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ার আটকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তদুপরি নির্মাণে অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে এ বাঁধের স্থায়িত্বও প্রশ্নের সম্মুখীন। দেখা গেছে, জলোচ্ছ্বাস নয়, অস্বাভাবিক জোয়ারের ধাক্কাই সইতে না পেরে বাঁধ ভেঙে যায়। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায়ই এভাবে বাঁধ ভেঙে যেতে দেখা গেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার কারণে উপকূলীয় জনজীবন ক্রমেই এক গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে উপকূলের অধিকাংশ মানুষকে অচিরেই ঘরবাড়ি ফেলে উদ্বাস্তুর জীবন বেছে নিতে হবে- এ ব্যাপারে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই।
আমরা উন্নয়নের যত ঢাকঢোলই বাজাই না কেন, উপকূলের তিন কোটি মানুষকে চরম ঝুঁকির মুখে রেখে কোনো উন্নয়নই স্থায়ী হতে পারে না- সে সত্যটি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। অবিলম্বে উপকূল রক্ষা বাঁধ উন্নয়নের ব্যবস্থা নিতে হবে। পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। স্থায়ী প্রকৃতির ঘরদোর নির্মাণে উপকূলবাসীদের সর্বাত্মক সহায়তা দিতে হবে। উপকূলীয় কৃষি রক্ষায় আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.