দুর্ভোগের কারণ সেই যক্ষ্মা!

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাতে গিয়ে শ্বেতাঙ্গ সরকারের হাতে শারীরিক নির্যাতন সহ্যসহ জীবনের ২৭টি বছর কারাবন্দি থাকতে হয়েছে ম্যান্ডেলাকে। কেপটাউনের পোলসমুর কারাগারে থাকাকালে ১৯৮৮ সালে তাঁর শরীরে প্রথম ধরা পড়ে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু।
চিকিৎসাবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সে যাত্রায় ম্যান্ডেলা সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁর শরীরে থেকে গেছে ওই জীবাণুর স্থায়ী প্রভাব। এ কারণে তাঁর ফুসফুসে বার বার সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।
মরণঘাতী এইডস রোগের মতো যক্ষ্মাও দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সমস্যা। সেখানে বছরে ৫৫ হাজারের বেশি লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। মারা যায় প্রায় তিন হাজারের মতো।
ম্যান্ডেলা নিজেও যক্ষ্মার ভয়াবহতা সম্পর্কে সজাগ ছিলেন। তিনি যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযানও চালান। ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল এইডস সম্মেলনে যে বার্তাটি তিনি পাঠান তাতে এইডসের পাশাপাশি যক্ষ্মা প্রতিরোধে সমান গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান বিশ্ব নেতাদের প্রতি, 'এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা জয়ী হতে পারব না যতক্ষণ না আমরা যক্ষ্মার বিরুদ্ধেও লড়াই শুরু করি।' কারণ তাঁর মতে, 'যক্ষ্মা এইডস রোগীদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা।'
ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে চলতি বছর কয়েক দফা হাসপাতালে যেতে হয় ম্যান্ডেলাকে। চলতি মাসে শুরুর দিকে তাঁকে ভর্তি করা হয় প্রিটোরিয়ার একটি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাঁকে আরোগ্য করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা তাঁর রোগের বিস্তারিত না জানালেও বলছেন, ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছেন ম্যান্ডেলা। এ থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, যক্ষ্মার জীবাণুর কারণেই হয়তো তাঁর ফুসফুসে বার বার সংক্রমণ ঘটছে।
স্থানীয় ফুসফুস বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মার জীবাণু যদি ম্যান্ডেলার ফুসফুসের কোষের বড় ধরনের ক্ষতি করে থাকে তবে তার প্রভাব মারাত্মক। তাঁর ফুসফুস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। উইটস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গাই রিচার্ডস বলেন, 'যক্ষ্মার জীবাণুর আক্রমণে যদি তাঁর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে তাঁর অর্থ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া ওই ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে। এ কারণেই তিনি বারবার অসুস্থ হচ্ছেন।'
নেলসন ম্যান্ডেলা মেডিক্যাল স্কুলের সাবেক ডিন উমেশ লালু বলেন, 'বেশির ভাগ যক্ষ্মা রোগীই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে দীর্ঘদিনের সংক্রমণে ফুসফুসের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর তার প্রভাবে বারে বারে সংক্রমণ প্রতিরোধে শরীরের ক্ষমতা কমে যায়।' তাঁদের মতে, একমাত্র ম্যান্ডেলার চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন তাঁর বার বার অসুস্থ হওয়ার কারণ। গত এপ্রিলে ম্যান্ডেলার নিউমোনিয়ার চিকিৎসা হয়েছিল। তবে আবারও নিউমোনিয়া হলে তা রোগীর জন্য ভয়ানক বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। সূত্র : সিটিপ্রেস।

No comments

Powered by Blogger.