প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে সকল নিয়োগের আবেদন অনলাইনে- চার বছরে ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে

 বিড়ম্বনা আর হয়রানি লাঘবে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সকল নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়া হচ্ছে অনলাইনে। এখন থেকে প্রাথমিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাধারণ পদ্ধতিতে হবে না।
অনলাইনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আজ টেলিটকের সঙ্গে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই প্রাক-প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো অনলাইনে প্রবেশ করবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মোঃ আফছারুল আমীন এমপি বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের সাড়ে চার বছরে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আরও ১৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
অনলাইনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাওয়া বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেছেন, দেশের লাখ লাখ মানুষ প্রাথমিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সময়ে তাতে অংশগ্রহণ করেন। এরা এখন একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ হয়ে গেছে। আবেদন করতে চাকরি প্রার্থীদের সময়, অর্থ যেমন বেশি ব্যয় হচ্ছে তেমনি দূর দূরান্তে গিয়ে আবেদন জমা দিতে হয় বলে সমস্যায় পড়তে হয়। জনসাধারণের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সরকার পুরো প্রক্রিয়া আরও সময় ও ঝামেলাহীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে টেলিটকের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করব আমরা। তিনি জানান, শীঘ্রই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হবে। ওই নিয়োগের আবেদনই হবে অনলাইনে। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মোঃ আফছারুল আমীন বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকারের সাড়ে চার বছরে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকার ডেমরায় মাতুয়াইল ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়ন, ঝরেপড়া রোধ ও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ও মা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সবার জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে শিক্ষার প্রতি মাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারাদেশে মা সমাবেশের আয়োজন করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যালয় গমনোপযোগী শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছে। ঝরেপড়া রোধ, মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকার দেশে বিদ্যমান সকল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে এবং শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নত মানের বিস্কুট ও মিড-ডে-মিল কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায়ে প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপ্টপ ও মাল্টিমিডিয়া সরবরাহের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করার জন্য দেশে পিটিআইবিহীন ১২টি জেলায় পিটিআই স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৫০০ বিদ্যালয় স্থাপন কর্মসূচী চালু রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করণের ঘোষণার ফলে এক লাখ চার হাজার প্রাথমিক শিক্ষক সরকারী চাকরিতে অন্তর্ভুক্ত হলো। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শুরুতেই প্রতিটি শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। এ সকল কর্মসূচী গ্রহণের ফলে ঝরেপড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং সাক্ষরতা হার ৬০ শতাংশের উপরে উন্নীত হয়েছে। মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ও মা সমাবেশে ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আলহাজ হাবিবুর রহমান মোল্লা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। মায়েদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, শুধু শিক্ষক, টিও এবং এটিও দিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। শিক্ষার গুণগত উন্নয়নে মা-বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, শিশুর প্রথম শিক্ষক একজন মা। মায়ের সচেতনতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.