যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ সাকার আবেদন খারিজ অসুস্থ থাকলে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য

 একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তিনটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আবেদনগুলো ছিল সুপ্রীমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটির সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি রাখা, প্রসিকিউশনের জব্দ তালিকার ৩১ নম্বর ডকুমেন্টটি অবৈধ ঘোষণা করে অগ্রণযোগ্য ঘোষণা ও সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো। অন্যদিকে সাকা চৌধুরী অসুস্থ থাকায় তার সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঐ দিনও সাকা চৌধুরী অসুস্থ থাকলে বা সাক্ষ্য দিতে না পারলে দ্বিতীয় সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। একই ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী শামসুল হক নান্নুর জেরা অব্যাহত রয়েছে। আজ আবার তাকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করবেন। অন্যদিকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার আরও তিন সাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ২৭তম সাক্ষী পিআইবির ক্যাটালগার রবিউল আনাম খান জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পরে তাকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেন। অসমাপ্ত জেরা রবিবার আবার করার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন।
সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তিনটি আবেদন খারিজ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে আসামিপক্ষের সাক্ষীদের তালিকা আজকের মধ্যে জমা দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সাকা চৌধুরী অসুস্থ থাকায় তার সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ৩০ জুন রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। ওই দিন তিনি অসুস্থ থাকলে তার পক্ষে দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ জুন নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার সময় আসামি সাকা চৌধুরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ওই দিন মামলার কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়। গতকালও সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হলে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ জন্য গতকাল তার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
গত ১৭ জুন সোমবার থেকে সাকা চৌধুরীর পক্ষে পাঁচজন সাফাই সাক্ষীর মধ্যে প্রথম সাক্ষী হিসেবে তিনি নিজেই সাক্ষ্য প্রদান শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৬ কার্যদিবসে ১২ সেশন তার নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
নিজামী ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী শামসুল হক নান্নুর জেরা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার তাকে জেরা করেন নিজামীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এ সাক্ষীর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় নিজামীর মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেন।
জেরা চলাকালীন নিজামীর আইনজীবী মিজানুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তৎকালীন সময়ে জামায়াতের প্রধান ছিলেন সম্ভবত মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান ছিলেন সম্ভবত মতিউর রহমান নিজামী। সাক্ষী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্চ মাসে নিজামী সাহেব পাকিস্তানে গিয়েছিলেন মর্মে কোন খবর প্রচারিত হয়েছে বলে আমার মনে নেই। একাত্তরে ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান কার্যালয় কোথায় ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, এতদিন পর তা আমি স্মরণ করতে পারছি না।
পাবনায় ইসলামী ছাত্রসংঘের অফিস কোথায় ছিল এর উত্তরে তিনি বলেন, পাবনার আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাস তখন অফিস হিসেবে ব্যবহƒত হত। গত ২০ জুন প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। গত বছরের ২৮ মে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি সহায়তা, পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের ৯ জানুয়ারি নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
আলীম ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের জব্দ তালিকার তিন সাফাই সাক্ষীর অন্তর্ভুক্তির আবেদন মঞ্জুর করেছে ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি আলীমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৭তম জব্দ তালিকার সাক্ষী পিআইবির ক্যাটালগার রবিউল আনাম জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পরে তাকে আসামিপক্ষ জেরা করেন। অসমাপ্ত জেরা করার জন্য রবিবার দিন নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন।
প্রসিকিউশনের ২৭তম জব্দ তালিকার সাক্ষী পিআইবির ক্যাটালগার রবিউল আনাম খান জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আমার নাম রবিউল আনাম খান, পিতা মোঃ মতিউর রহমান খান, গ্রাম- যাত্রাসিদ্ধি, পোঃ দত্তের বাজার , থানা গফরগাঁও, জেলা- ময়মনসিংহ। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট ক্যাটালগার হিসেবে কর্মরত আছি। ১২-৪-২০১১ তারিখে অত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলতাবুর রহমান পিআইবিতে এসে সেখানে গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ১০টি কাটিং জব্দ করে। ১৪-১২-২০০০ থেকে ২৬-১২-২০০ পর্যন্ত পৃথক পৃথক ১০টি পত্রিকার সেই রাজাকার সিরিজের ১০টি সংখ্যা আমার ও আমার সহকারী বুক সার্টার এসএম আমিনুলের উপস্থিতিতে জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন।
এই সেই জব্দ তালিকা। জব্দ করার পর মূল কপির সত্যায়িত ফটোকপি আমার জিম্মায় দেন। (ডিফেন্সের) আপত্তি সহকারে। পিআইবির গ্রন্থাগার থেকে প্রদর্শনী ৫ দৈনিক জনকণ্ঠের সংশ্লিষ্ট সংখ্যাগুলো ট্রাইব্যুনালে এনেছি। এই সেই পত্রিকাগুলোর কপি। যেগুলো সত্যায়িত ফটোকপি জব্দ করা হয়।
সাক্ষী আরও বলেন, ৩০-৫-২০১১ তারিখ বিকেল ৩টার সময় গ্রন্থাগারে এসে ভোরের কাগজ, ৮-১১-২০০৭ থেকে ১৯-১১-২০০৭ পর্যন্ত রাজাকারের একাত্তর ১০টি পত্রিকা জব্দ করা হয়। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী এএইচএম আহসানুল হক হেনা তাকে জেরা করেন। পরবর্তী জেরার জন্য রবিবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত। গত বছরের ১১ জুন আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ৭ ধরনের অপরাধের সুনির্দিষ্ট ১৭টি ঘটনা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে আলীমের বিরুদ্ধে ২৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.