ব্র্যাকের জরিপ জনগণের আকাঙ্ক্ষাকেই প্রকাশ করেছে নারী-বৈষম্য

মানুষ কী চায় তা জানা কঠিন হলেও তা একেবারে অসম্ভব নয়। সারা দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার গড়পড়তা চেহারাটি ধরতে জরিপের প্রচলন রয়েছে। সে ধরনেরই একটি জরিপ প্রকাশ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।
তাতে জানা যাচ্ছে, নারীর প্রতি বৈষম্যকেই প্রধান সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বেশির ভাগ উত্তরদাতা। বেগম রোকেয়ার যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একেবারে কম তৎপরতা পরিচালিত হয়নি। এই ‘জ্ঞান’ নারীর উন্নতি ও অধিকারকেন্দ্রিক সেসব কাজকর্মের স্বীকৃতিও বটে।
লক্ষ করার বিষয় যে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার এই আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। এমন নয় যে নারী-পুরুষ বৈষম্য কেবল গ্রামীণ সমস্যা—এটা জাতীয় সমস্যা। তার পরও গ্রামের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতা তৈরি হওয়া এক ইতিবাচক লক্ষণ। ২০১৫ সালের পরে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা জানতেই ব্র্যাক এই জরিপ পরিচালনা করে। স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকের জরিপে উন্নয়নের প্রশ্নটিই প্রাধান্য পাওয়ার কথা। সংস্থার কর্মীরা গ্রামীণ পর্যায়ে ৩০ হাজার ২৩৪ জনের কাছ থেকে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করেন।
জরিপের এই ফলকে লোকপ্রজ্ঞার প্রকাশও বলা যেতে পারে। কেননা, সমাজের অর্ধেক অংশকে প্রতিকূল বাস্তবতায় রেখে কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না। অর্থনৈতিক-সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নারী পুরুষের সমান অধিকার অর্জন করলে, ওই তিনটি ক্ষেত্রেই বহু শতাব্দীজুড়ে বিরাজ করা অচলাবস্থা দূর হবে। এ জন্য যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা দরকার, যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও আইনগত সংস্কার করা দরকার, সরকারের দিক থেকে তার আয়োজন অতি সামান্য। এমনকি সম্পত্তি অর্জন ও উত্তরাধিকার প্রশ্নেও রক্ষণশীলতার বাধা এখনো প্রবল।
সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়, নারীর শ্রম, উৎপাদনশীলতা, বুদ্ধি ও উদ্যোগ যুক্ত হলে সব ক্ষেত্রেই বিকাশ আরও গতি পাবে। যেসব দেশে নারী-পুরুষে বৈষম্য কম, সেসব দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিই তার প্রমাণ।
জরিপে নারী-বৈষম্যবিরোধী জনমতের প্রতিফলন ঘটলেও, নারী-বৈরী মনোভাব ও কার্যক্রম এখনো প্রবল। নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য এখনো ভয়াবহ মাত্রায় বিরাজ করছে। ব্র্যাকের জরিপে সাধারণ মানুষের চাওয়াটাই প্রকাশিত হয়েছে—যাদের মধ্যে রয়েছে নারীরাও। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাজ হচ্ছে, সেই চাওয়া পূরণে নতুন করে কর্মসূচি নেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.