তিন অধ্যায় by ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন কে? এই প্রশ্ন তখন মোটামুটি আকাশে-বাতাসে। আমরা মুখে কুলুপ এঁটে ঘোরাঘুরি করছি। হ্যাঁ-না, কোনো উত্তরই দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ মূলত দুই।
যে দুজনকে নিয়ে ভাবছি, তাঁদের আদৌ ‘এক’ করা যাবে কি না, এই নিয়ে অনিশ্চয়তা। দ্বিতীয় কারণ, চমক ধরে রাখা। এখন অবশ্য সবাই জানেন, মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরী এই দুজন ছিলেন মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। সঙ্গে ছিলেন মুনমুন।
কিন্তু এই মানিকজোড়কেই কেন আবারও টেনে আনা? মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠানের চিত্রনাট্য অনুযায়ী এবারও আমাদের প্রয়োজন ছিল যতটা না গতানুগতিক ধারার উপস্থাপক, তার চেয়েও বেশি অভিনেতা এমন কাউকে; যাঁরা যেকোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন।
পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা মাথায় ছিল, কিন্তু ঠিক অনুষ্ঠানের দিন ঢাকা শহরের পরিস্থিতি এমন অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠবে, জানা ছিল না। অনুষ্ঠানের দিন বেলা ১১টায় দুই উপস্থাপকের চূড়ান্ত অনুশীলন শুরু করার কথা। এর মধ্যে সাভার ট্র্যাজেডির প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ পোশাকশ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছেন। ভাঙচুর চলছে। গাড়ি বের করা মানে মস্ত ঝুঁকি। তাঁরা আদৌ আসতে পারবেন?
ঠিক ১১টায় চঞ্চল চৌধুরীর ফোন: ‘আমি ন্যাম-এ, আপনারা কই?’
শিল্পীর পেশাদারি আর দায়বদ্ধতা সম্ভবত একেই বলে!
দুই মিনিট পরই ফোনের ওপাশে মোশাররফ করিম: ‘গাড়ি ছেড়ে রিকশায় উঠেছি। রাস্তাজুড়ে ভাঙা কাচ আর কাচ।’
মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছি। মহাখালীতে এসে পুলিশ আর শ্রমিকদের মুখোমুখি অবস্থান দেখে বারবার রাস্তা পাল্টাচ্ছি। বিশেষ সুবিধে হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার মোশাররফের ফোন: ‘রিকশা আর যাচ্ছে না। কী করি? আমি হাতিরঝিলে আটকা।’ হাতিরঝিল থেকে মোশাররফ করিমকে ‘উদ্ধার’ করতে মূল্যবান ৩০ মিনিট বেরিয়ে গেল। অভিনেতা মোশাররফ করিমকে রাস্তায় দাঁড়ানো দেখে ততক্ষণে উৎসুক ভক্তকুল ছেঁকে ধরেছে। ‘আরেক দিন হবে ভাই। আরেক দিন।’ বলে মোশাররফ রোদে ঘামতে ঘামতে বিনা আপত্তিতে উঠে এলেন মোটরসাইকেলের পেছনে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘড়ির কাঁটা প্রায় একটা ছুঁই ছুঁই।
মঞ্চে উঠে আমাদের প্রিয়তম দুই জনপ্রিয় অভিনেতা আরও একবার ঝালিয়ে নিলেন নিজেদের। শোকের আবহে পুরোপুরি বিনোদননির্ভর অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত পাল্টে গিয়েছিল তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে। চঞ্চল ও মোশাররফ সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিও সামাল দিয়েছেন অসাধারণ দক্ষতায়। প্রমাণ করেছেন, তাঁরা শুধুই তুখোড় অভিনেতা বা নির্মল বিনোদনদাতা নন, শোকার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজটিতেও তাঁরা অগ্রগামী।
চিত্রনাট্য অনুযায়ী মোশাররফ-চঞ্চলের মাঠে নামার আগে অনুষ্ঠানের শুরুর অংশ সফল করার দায়িত্ব ছিল অভিনেত্রী ও উপস্থাপক মুনমুনের কাঁধে। মুনমুন সেই চ্যালেঞ্জ জয় করেছেন অনায়াসে। উপস্থাপনার ‘রিলে রেস’-এর শুরুটা জোরদার হয়েছে তাঁরই সুবাদে।

No comments

Powered by Blogger.