৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ বাতিল করেছে এডিবি by আরিফুর রহমান

বাংলাদেশের ছয়টি প্রকল্প থেকে ৭০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার ঋণ বাতিল করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে খরচ করতে না পারায় এই শাস্তি। ঋণ বাতিলের বিষয়টি এরই মধ্যে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ৭০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৫৯ মিলিয়ন ডলার কঠিন শর্তের ঋণ ছিল। বাকি ১১ মিলিয়ন ছিল সহজ শর্তের ঋণ। জানা গেছে, ছয়টির মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের তিনটি প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়া দুটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও একটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোতে এডিবির অর্থ খরচই হয়নি। ফলে ঋণ বাতিল করা হয়েছে। আবার কিছু প্রকল্পের মেয়াদ শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। যেটুকু সময় আছে, তার মধ্যে এডিবির অর্থ খরচ করা সম্ভব নয়। তাই ঋণের ওই অর্থও বাতিল করা হয়েছে। তবে এটিকে বাতিল বলতে নারাজ তিনি। সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সহজ শর্তের ঋণের অংশটি আবার অন্য প্রকল্পে পাওয়া যাবে। তবে কঠিন শর্তেরটি আর পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এডিবি ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সংস্থাটির অর্থায়নে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬০টির মতো প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে ৩২টিকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এডিবি। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি খুবই মন্থর। তাই এগুলোর জটিলতা মেটাতে আগামী ৩ জুলাই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এতে এডিবি, ইআরডি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হওয়ার কথা। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মহাপরিচালক হুয়ান মিরান্ডা এডিবির পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদ থাকবেন।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এডিবির বোর্ড সভায় অনুমোদন পাওয়া ‘টিচিং কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে ছয় মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছিল সংস্থাটি। আগামী ৩০ জুন এ প্রকল্পের জন্য যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের ৩.২৫ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এটিও সহজ শর্তের ঋণ ছিল।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ‘গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এটি কঠিন শর্তের ঋণ ছিল। এ ছাড়া ‘চিটাগাং পোর্ট ট্রেড আধুনিকায়ন’ প্রকল্প থেকে চার মিলিয়ন ও ‘টেকসই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এ দুটি কঠিন শর্তের ঋণ ছিল। ‘টেকসই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প থেকে ২.৫০ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এটি সহজ শর্তের ঋণ ছিল। বাকি পাঁচটি প্রকল্পের জন্য যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তা ৩০ জুলাই বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন- এই ছয় মাসে ৬০৩ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার টার্গেট ঠিক করেছিল এডিবি। কিন্তু আলোচ্য সময়ে অর্থ ছাড় হয়েছে ২৩২ মিলিয়ন ডলার। এটি আশানুরুপ নয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তাই দ্রুত অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিয়েও ৩ জুলাইয়ের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.