হাজির হয়ে নজির গড়ূন by আসিফ আহমেদ

 রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ও না থাকার মধ্যে কী বিস্তর ফারাক_ এক সময়ে যাদের দোর্দণ্ড প্রতাপ, তারা অন্য জীবনে কত যে অসহায়! ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনে জরুরি আইন জারির পেছনে সে সময়ের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের সক্রিয় ভূমিকা সুবিদিত।
তবে ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে 'বিএনপির বুদ্ধিজীবী' হিসেবে পরিচিত সে সময়ের রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করে যে রাজনৈতিক অরাজকতা ডেকে নিয়ে এসেছিলেন তা থেকে নিষ্কৃতি মেলায় পাবলিক জরুরি আইনকে স্বাগত জানায়। এর ধারাবাহিকতায় প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। তবে ক্ষমতা যে সেনাবাহিনীর হাতে চলে গেছে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ছিল নিঃসন্দেহ। ওয়ান-ইলেভেনের পর কয়েক মাস 'সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার' বলা হতে থাকে। এতে কেউ আপত্তি করেনি। তবে প্রশ্ন উঠতে থাকে : অন্যান্য সময়ের সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন থাকে না? সেনাসমর্থিত বললে কি নৌ ও বিমান বাহিনীর সমর্থনের বিষয়টি প্রকাশ পায়?
দেশ গণতন্ত্রের পথ ছেড়ে ফের মার্শাল 'লর কবলে পড়তে চলেছে এমন শঙ্কা দানা বাঁধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জিমনেসিয়ামে সেনাক্যাম্প স্থাপন তো তারই আলামত ছিল। এ ক্যাম্পের কিছু সেনাসদস্যের হাতেই ২০০৭ সালের আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হয়। তার প্রতিবাদ হলে আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান এবং এইচএম এরশাদের আমলের মতো সঙ্গিনে তা দমনের চেষ্টা চলে। জারি হয় কারফিউ। গ্রেফতার করা হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষককে। বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর বাড়ি ফেরার জন্য বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। কিন্তু তাতে আন্দোলন থামে না। এক পর্যায়ে তদন্ত কমিটি হয়।
এখন গণতান্ত্রিক শাসনামলে ওই ঘটনার তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। এর সদস্যরা ফখরুদ্দীন আহমদ ও মইন উ আহমেদের বক্তব্য কমিটিতে হাজির হয়ে জানানোর জন্য তাদের চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু দু'জনেই এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং কেউই কমিটির সামনে হাজির হতে উৎসাহী নন বলে জানিয়েছেন। তবে কমিটি তাদের আবারও অনুরোধ করে ৫ জুন হাজির হতে বলেছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর। তারা হাজির হয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। এটাই জবাবদিহিতা। কমিটির তরফে যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে সেটাও তারা বলতে পারবেন। আর কমিটি যদি গুরুতর কোনো ভুল বা অনিয়ম করে তাদের নিজেদের জন্যও ভবিষ্যতে এ নজির শঙ্কার বীজ বপন করে রাখবে। ভবিষ্যতের কোনো সংসদীয় কমিটি তাদের কাছে জবাবদিহি করার জন্য হাজির হতে বলবে। তখন তারা ঘায়েল হবে নিজেদের অস্ত্রেই। ফখরুদ্দীন আহমদ ও মইন উ আহমেদ হাজির হয়ে এ প্রক্রিয়ার সূচনা করতে পারেন।
শুধু জরুরি আইনের সময় নয়, যে কোনো সময়েই যারা দেশের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের সর্বদা জবাবদিহি করার জন্য প্রস্তুত থাকা চাই। এ ক্ষেত্রে শুধু একটি শর্ত পূরণ করা চাই_ পক্ষপাতহীনভাবে কাজ সম্পাদন। সংসদে যে দল বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা যদি নিজেদের লোককে ছাড় দেয় এবং কেবল বিপক্ষের লোক বলে চিহ্নিতদের কমিটির সামনে হাজির হতে বলে সেটা মোটেই ভালো নজির হবে না।
 

No comments

Powered by Blogger.