মতামত- কর্তব্যে অবহেলার মাধ্যমে মৃত্যু ঘটানো অপরাধ by আবদুল বাসেত মজুমদার

আশুলিয়ার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রচলিত ফৌজদারি আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এ অগ্নিকাণ্ড ও ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পেছনে অবশ্যই মালিকপক্ষ ও কারখানা ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল। তা ছাড়া, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জেনেছি, অগ্নিকাণ্ডের সময় তাজরীন ফ্যাশনসের শ্রমিকদের বের হতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় কারখানার অনেক ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। ফলে শ্রমিকেরা আটকা পড়েন। মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের এমন কর্মকাণ্ড নিরঙ্কুশভাবে আমলযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। প্রচলিত দণ্ডবিধির আওতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দণ্ডবিধির ৩০৪ (এ) ধারায় অবহেলার মাধ্যমে মৃত্যু ঘটানোর জন্য শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বেপরোয়া বা তাচ্ছিল্যপূর্ণ কোনো কাজের জন্য কারও মৃত্যু ঘটলে (যা অপরাধজনক নরহত্যা নয়), দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। অন্যদিকে ৩০৪ ধারার শেষাংশে উল্লেখ করা হয়—মৃত্যু ঘটানোর ইচ্ছা নেই তবে জানে, এ কাজে মৃত্যুর আশঙ্কা আছে, এরূপ কোনো কাজের দরুন কারও মৃত্যু হলে; দায়ী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আশুলিয়ার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির উল্লিখিত যেকোনো ধারায় মামলা করা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বা তাঁদের আত্মীয়স্বজন যে কেউ থানায় গিয়ে এ মামলা করতে পারেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ ধরনের মামলা অতীতেও হয়েছে। আশুলিয়ার অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে, দণ্ডবিধির আওতায় থানায় মামলা হয়েছে। এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। অবশ্য এ ঘটনায় ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের মামলা করারও সুযোগ আছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বা তাঁদের আত্মীয়স্বজন এটা করতে পারেন। কারখানায় অব্যবস্থাপনার বিষয়টি নতুন নয়। হরহামেশাই এটা হচ্ছে। নিরীহ শ্রমিকেরা প্রায়ই এমন বহুমাত্রিক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তাই আশুলিয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দণ্ডবিধির আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী।

No comments

Powered by Blogger.