বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রী- জনগণের মন বোঝার চেষ্টা করুন, জামায়াতকে ছাড়ুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিজয়ের মাসে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধীদলীয় নেত্রী আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছেন। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। কেউ তাঁদের বাঁচাতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। নইলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টার জন্য আপনাদের কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করেছি। এতে জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। জনগণের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করুন। জামায়াত-শিবির ছাড়ুন। তাহলে আপনার একটা জায়গা হবে। না হলে আপনার দুর্নীতি আর লুটপাটের বিচার এ দেশের মাটিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন তাঁর ছেলেরা নাকি সৎ জীবন যাপন করে। যেদিন এ কথা বললেন, সেদিনই তাঁর ছেলেদের পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত এসেছে। এই অর্থ পাচারের মামলা আওয়ামী লীগ করেনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেনি। মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে।
বিরোধীদলীয় নেতার বড় ছেলে লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে জীবনযাপনের টাকা কোথা থেকে আসে। দুর্নীতি ছাড়া এত টাকা কোথা থেকে আসবে। কথায় আছে না, চোরের মায়ের বড় গলা। মানুষ সব জানে, গলাবাজি করে কাজ হবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়া কালোটাকা সাদা করেছেন। অন্যদিকে তাঁর ছেলেরা দুর্নীতি এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতা দখলের পর সংবিধান সংশোধন করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করেছেন। পরে তাঁর স্ত্রী তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছেন।
শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করে বলেন, ‘একদিকে জিনিসের দাম কমিয়েছি। অন্যদিকে বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি।’
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চিফ হুইপ মো. আবদুস শহীদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান প্রমুখ।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে মণিপুরি সাংস্কৃতিক পরিষদ মঞ্চের সামনে মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করে।
সিলেট বিভাগে চা নিলাম কেন্দ্র হবে
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমঙ্গলে নবনির্মিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মৌলভীবাজার হাসপাতাল ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন এবং উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ কলেজ ও মঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে এক সমাবেশে তিনি বলেন, চা সেক্টরের উন্নয়নে সিলেট বিভাগে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সিলেট বিভাগে একটি চা নিলাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
শ্রীমঙ্গলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এখানকার নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে নানা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ বিভাগে চা-শ্রমিকদের উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশে ১৫ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যকর, নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও পুরোনো হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আবদুস শহীদ বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.