ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্মল পরিবেশের প্রত্যাশা অসাধারণ এক শপথ

বিপুল-বিশাল জনগোষ্ঠীর ভারে নাভিশ্বাস উঠেছে আমাদের ছোট্ট এই দেশের। জনঘনত্ব যত বাড়ছে ততই বিপন্নতা বাড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। নদী-নালা-খাল-বিল দখল ও ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো এখনো দখলের শিকার হয়নি, সেগুলো দূষণের শিকার হচ্ছে।
শিল্পকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদী ও অন্যান্য জলাশয়ে। কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে বিপন্ন হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য। মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কেঁচোসহ অজস্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব-অণুজীবের বিপন্নতা বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রজাতির মাছ। বনবাদাড়ের সংখ্যা কমে গেছে, দ্রুত আরও কমে যাচ্ছে। পাখিহীন হয়ে যাচ্ছে অনেক জনপদ। সব মিলিয়ে, পরিবেশ সুরক্ষার তাগিদ আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে অনেক আগেই। এবং যতই দিন যাচ্ছে, সেই তাগিদ ততই বাড়ছে।
তাই, বাংলাদেশ সরকারের ৩৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট যখন একসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন যে তাঁরা দেশের পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, তখন এটিকে খুবই সময়োচিত, অসাধারণ এক শপথ বলে মনে হয়। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর আছে, দূষণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আছে অনেক আইনকানুন, যেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হলে পরিবেশদূষণের লাগামহীন প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে। ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে তাঁরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে এবং দূষণের অপরাধের দায়ে দোষী ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী শাস্তি দিলে তার একটি ইতিবাচক প্রভাব সমাজে সৃষ্টি হবে। পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর অনেক কর্মকাণ্ডকে অনেকে অন্যায়-অপরাধ বলে মনেই করে না। আবার অনেকে অন্যায় জেনেও এসব করে। কারণ, অন্যরাও তা অবলীলায় করে, কারোরই তো কিছু হয় না। আসলে এভাবে যে আমাদের সবার জন্য ও বিশেষ করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই দেশ ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে—এই সচেতনতারই বড্ড অভাব রয়ে গেছে।
সেদিক থেকে ৩৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের শপথ একটা বড় আশাব্যঞ্জক ঘটনা। তাঁরা তাঁদের শপথ রক্ষা করলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ অন্তত আমাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য বাসযোগ্য থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.