বাড়ছে নারী নির্যাতনের ঘটনা by মেখ্যাইউ মারমা

পটিয়া থানার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা উম্মে সালমা (১৯) বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন। মেয়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে সালমার পরিবার তাঁর স্বামী ওমর ফারুককে (২৯) ওই সময় নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়।
সম্প্রতি ব্যবসার কথা বলে ফারুক আবারও টাকা চায় সালমার পরিবারের কাছে। টাকা দিতে অসম্মতি জানালে সালমার ওপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। উম্মে সালমার মতো এখনো যৌতুকের কারণে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন অনেক নারী। ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, গরম পানি ছিটিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। আদালত এবং বেসরকারি আইন সহায়তাদানকারী সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর এবং উপজেলাগুলোতে গত বছরের তুলনায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে। এ ছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তালাক ও ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত অভিযোগও আগের তুলনায় বেড়েছে।
গত সোমবার আদালতের বারান্দায় কথা হয় বিচারপ্রার্থী উম্মে সালমার সঙ্গে। তিনি জানান, এর মধ্যে স্বামী ওমর ফারুককে প্রধান আসামি করে শ্বশুর-শাশুড়ির নামে আদালতে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা করেছেন। স্বামী পলাতক রয়েছেন। কোর্ট-কাছারি ঘুরছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত সুরাহা মেলেনি।
চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের তিনটি ট্রাইব্যুনালে (১,২ ও ৩) ২০১১ সালে মামলা হয়েছে দুই হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামিরা খালাস পেয়েছেন ৮৭৭টি মামলায়। মাত্র সাতটি মামলায় সাজা হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের। তবে ২০১২ সালে (অক্টোবর পর্যন্ত) মামলা হয়েছে তিন হাজার ১৭০টি। এর মধ্যে এক হাজার ৬৮৯টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। ৯৭টি মামলায় অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে।
নারীদের আইনি সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যসূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে অভিযোগ আসে ৪৭৪টি। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। অপরদিকে চলতি বছর ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত নারী নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৭৩৬টি। মামলা করার যোগ্য ছিল ছয়টি। অন্যদিকে আরেকটি আইন সহায়তাদানকারী সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) কাছে গত বছরের চেয়ে এ বছর নারী নির্যাতনের অভিযোগ কম এসেছে। ২০১১ সালে ব্লাস্টের কাছে নারী নির্যাতনের অভিযোগ জমা হয় ৬৬৬টি। যার মধ্যে সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছে মাত্র ১২টি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে ৯৪টি। তবে ২০১২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারী নির্যাতনের অভিযোগ আসে ৫৩৩টি। সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮টি এবং মামলা হয়েছে ৭২টি।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। এতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী নির্যাতিত নারীরা। এ বিষয়ে ব্লাস্ট চট্টগ্রাম ইউনিটের সমন্বয়কারী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নারী নির্যাতনের ঘটনা কমেছে তা কখনোই বলা যাবে না। নির্যাতন প্রতিরোধে দেশের আইন নারীদের পক্ষে হলেও দারিদ্র্য, আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলাগুলো ঝুলে থাকে।
চট্টগ্রামের মানবাধিকার সংস্থা ফাইট ফর উইমেন রাইটসের সভাপতি রেহেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার হার বাড়ায় নারী তাঁর অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে বাড়েনি বিচারকের সংখ্যা এবং মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত লোকবল। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে কম। তবে আইনি সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রাখা উচিত মামলা প্রতিরোধ করে কাউন্সিংলি প্রদান করা।

No comments

Powered by Blogger.