ফুটপাত দখল করে সংগঠন কার্যালয়! by আশরাফ উল্লাহ

সংগঠনের নাম মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড পরিচালনা পরিষদ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পূর্ব গেটের সামনে ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে সংগঠনটির কার্যালয়। সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখান থেকে। গত জুন মাস থেকে এই অবস্থা।
অথচ সিটি করপোরেশন বিষয়টি জানেই না। কারণ তারা ‘অভিযোগ’ পায়নি।
আশপাশের ওষুধের দোকানি ও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, কার্যালয়ের আশপাশে সড়কের ওপর সব সময় দাঁড়িয়ে থাকে ভাড়ায়চালিত অ্যাম্বুলেন্স। চালকদের জটলাও থাকে কার্যালয়টি ঘিরে। ফলে বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চমেক হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন ভোগান্তিতে। কারণ, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার সড়ক দিয়ে প্রায় সময় রোগীদের বহনকারী গাড়ি চলাচল করে। এ ছাড়া ঢুকতে বেরোতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন আবাসিক এলাকার লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজ পূর্ব গেটের এক ওষুধের দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রায় সময় পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ঢোকার মুখেই থাকে। অনেক সময় তো আবাসিক এলাকার সড়কেও রাখা হয় গাড়ি। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। কারণ তারা সংগঠিত। এত দিন ধরে ফুটপাত দখল করে থাকলেও কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, কেবি ফজলুল কাদের সড়কে মেডিকেল পূর্ব গেটের বিপরীতে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে কার্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। টিনের বেড়া দেওয়া এক কক্ষের কার্যালয়টির দেয়ালে ঝুলছে ১১ সদস্যের কমিটির ছবিসহ তালিকা, সঙ্গে মুঠোফোন নম্বর। কার্যালয়ে কথা হয় মাইক্রোবাস-চালক মোহাম্মদ মাবুদ, আবু তাহের ও মোহাম্মদ বাদশার সঙ্গে। তাঁরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল এলাকার দুই শতাধিক অ্যাম্বুলেন্সচালক এ সংগঠনের সদস্য। চালকদের কোনো সমস্যা হলে পাশে দাঁড়ান সংগঠনের নেতারা। দুই বছর অন্তর কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, সংগঠনটি চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক সমিতি শ্রমিক ইউনিয়নের অঙ্গসংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্সগুলো পরিচালিত হয় এ সংগঠনের অধীনে। সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্যরা মেডিকেল কলেজ স্ট্যান্ডে অ্যাম্বুলেন্স রাখতে পারে না।
ফুটপাত দখল করে কার্যালয় স্থাপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে এখানে বসেছি। তা ছাড়া এটা শুধু চালকদের নয়, এখান থেকে মালিকদের কার্যক্রমও পরিচালিত হয়।’ প্রশাসনের অনুমোদন বলতে সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের কথা বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাতের কার্যালয় করার অনুমতি কেউ দেবে না। এটা বেআইনি। আমরা বিষয়টি এত দিন জানতাম না। তা ছাড়া কেউ অভিযোগও করেনি।’ অভিযোগ ছাড়াও ফুটপাত দেখভাল করা সিটি করপোরেশনের নিয়মিত কাজের মধ্যে পড়ে তাহলে আপনারা ব্যবস্থা নেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়মিত কাজের মধ্যে পড়ে, এটা ঠিক; কিন্তু সব ফুটপাত দেখভাল করতে হিমশিম খেতে হয়। তবে আমরা শিগগির এই অবৈধ কার্যালয়টি উচ্ছেদ করব।’

No comments

Powered by Blogger.