ঝড়ে প্রাণহানি-সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে

বাংলাদেশের উপকূলীয় কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বুধবার দিবাগত রাতের আকস্মিক ঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ২৭ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল যেই ঝড়ে, সেখানে জানমাল রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সংগত কারণেই সে প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে।


স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা সতর্ক সংকেতের খবর জেনেছে। কিন্তু ঝড় এভাবে আঘাত হানবে তেমন কোনো ধারণা তাদের দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাত থেকে সাগরে পরিলক্ষিত লঘুচাপ বুধবার রাতে নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল এবং প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ঝঞ্ঝা হওয়াটা নতুন নয়। ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল সতর্কতামূলক, যা উপকূলীয় মানুষের কাছে তেমন একটা গুরুত্ব পায় না সাধারণত। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, কেউই বিষয়টিকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করেনি। আবার সতর্ক সংকেত থাকার পরও উপকূলীয় এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকেও যে বিরত ছিল তা-ও বোঝা যায়। সাধারণত এ মৌসুমে, বিশেষ করে আবহাওয়া বিরূপ হলে জেলেরা মাছ পায় বেশি। এটা চিরায়ত বিশ্বাস। সে কারণে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতকে তারা তেমন একটা বিপজ্জনক বলে মনে করে না। যে জন্য বুধবার সন্ধ্যা থেকেই যখন আবহাওয়া খারাপ হতে থাকে তখনো তারা চিন্তা করেনি সাগর তাদের মরণের ডাক দিচ্ছে। প্রশাসনের অবহেলা ও স্থানীয় মানুষের অসাবধানতা এই বিশাল ক্ষতি ডেকে এনেছে। সংবাদমাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা হয়তো আরো বাড়বে। এখনো শত শত জেলের নৌকা তীরে ভেড়েনি। নিখোঁজ রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আরো দুঃসংবাদ যে অপেক্ষা করছে তা অনুমান করা যায়।
উপকূলীয় এলাকার মানুষ আইলা, সিডরের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস তাদের কাছে অপরিচিত কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এর পরও তাদের সতর্ক করা, আত্মরক্ষার পথ দেখিয়ে দেওয়া এবং সহযোগিতার হাত বাড়ানো সরকারের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে গভীর রাতের কথা বলাটাও গ্রহণযোগ্য নয়। পূর্বসংকেত থাকলে ঝড়ের আগে অনেকেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারত।
দুর্যোগ ঘটে যাওয়ার পর এখন উদ্ধার তৎপরতাকে আন্তরিকতার সঙ্গে নিতে হবে। হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। খাবার ও পানীয়ের অভাব সেখানে তীব্রতর। আশ্রয়হীন ও খাদ্যহীন মানুষগুলোকে দ্রুত খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ঘরদোর তৈরি করে দিতে হবে। দুর্গতদের জরুরি চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে এখনই। যেহেতু দুর্যোগ মৌসুম শেষ হয়ে যায়নি, তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্যই আরো সচেতন হতে হবে, যাতে এমন ক্ষয়ক্ষতি আর না ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.