অনিশ্চিত ঢাকার রিকশার ভবিষ্যৎ

রাজধানী ঢাকার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য এ শহরটির রিকশা। প্রায় দেড় কোটি মানুষের মেগাসিটি ঢাকার আনাচে-কানাচে রয়েছে কয়েক লাখ রিকশা। আধুনিক নগরজীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এ শহরের সবকিছু দ্রুতগতিতে চললেও, গবেষণায় দেখা গেছে এই দ্রুত নগরজীবনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শহরটির শতকরা ৩৪ শতাংশ মানুষই তাদের প্রাথমিক যানবাহন হিসেবে বেছে নেন স্বল্পগতির রিকশাকে। আর এই রিকশার উপরেই নির্ভর করে লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবিকা।

পৃথিবীর বিভিন্ন মেগাসিটিতে যখন মানবচালিত যানের ব্যবহার কমছে, তখন মেগাসিটি ঢাকায় রিকশা দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এর প্রয়োজনীয়তার কথা যেমন অনেকেই বলছেন, তেমনি দিন দিন সীমিত হচ্ছে এর গতিবিধি। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য রিকশার ভবিষ্যৎ।

৩০ বছর যাবৎ রিকশার কারিগর মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিনের (যিনি টেক্কা মিস্ত্রী হিসেবে বেশি পরিচিত কাছে প্রতিটি রিকশাই একটি শিল্পকর্ম।

তবে বেদনার সাথেই টেক্কা মিস্ত্রী বললেন, আগে একটি শিল্পকর্ম হিসেবে যেভাবে রিকশার কদর ছিল, এখন সেরকম শৈল্পিকভাবে রিকশা বানানোর আগ্রহ কমে গেছে।

ঢাকায় রিকশার সর্বশেষ লাইসেন্স দেয়া হয় ১৯৮৬ সালে। প্রায় ৮৮ হাজার রিকশা তখন লাইসেন্স পায়। কিন্তু যথাসময়ে নবায়ন না করায় এখন ঢাকায় লাইসেন্সসহ রিকশার সংখ্যা ৮০ হাজারের মতো। ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিকশার নতুন কোনো লাইসেন্সও দেয়া হয়নি।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা শহরে রিকশার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। আর গত দুই বছর যাবৎ পুরনো লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় বর্তমানে ঢাকার সব রিকশাই কার্যত: অবৈধ।

রিকশার লাইসেন্সের দায়িত্বে থাকা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বলছে, রিকশা কমানোর জন্য তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে বৈধভাবে রিকশা বাড়ানোর বিষয়ে তাদের অনাগ্রহের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। কারণ ঢাকার যানজট।
এ কারণে গত কয়েক বছরে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ থেকেও ঢাকার অনেক সড়কেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রিকশার চলাচল।

তাই প্রয়োজনীয়তা, কর্মসংস্থান, ঐতিহ্য সব মিলিয়েই ঢাকা শহরে রিকশা যদিও অনেক দিন টিকে থাকবে বলেই মনে হয়, কিন্তু এই রিকশার ওপর জীবিকানির্ভর মানুষকে যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নানা সংগ্রামে জয়ী হতে হবে এই ঐতিহ্যবাহী পরিবহন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

No comments

Powered by Blogger.