ঈদ আনন্দ- মনে পড়লেই হাসি পায়

কিউ বিষয়টা কী?: মৌসুমীএকেবারে ছোটবেলার কথা। তখন খুলনায় থাকি আমরা। প্রথম শ্রেণীতে পড়ি হয়তো। আমাদের পিচ্চিদের একটা দল ছিল। একসঙ্গে খেলতাম। আমাদের বাসার একটু দূরেই ছিল এক খালার বাড়ি। ঈদ উপলক্ষে ওখানে মেলা হচ্ছিল। দূরে না হলেও তখন আমাদের যে বয়স, তাতে মেলার স্থানটা অনেক দূরেই মনে হতো।


একদিন আমরা বন্ধুরা মিলে বুদ্ধি করলাম মেলা দেখতে যাব। তবে কাউকে বলা যাবে না। বললে যেতে দেবে না। পাশেই যেহেতু খালার বাড়ি, তাই সাহসও হলো। আমরা আইসক্রিম খেতে খেতে দুপুরবেলায় বাসার সবার অজান্তেই হেঁটে মেলার উদ্দেশে রওনা হলাম।
মেলার বিশাল গেট। সবাই মিলে ঢুকলাম। অনেক বড় জায়গা নিয়ে মেলা চলছে। ভিড়ও বেশি। আমরা সবাই সবার হাত ধরে মেলার ভেতর হেঁটে যাচ্ছি, রংবেরঙের জিনিস দেখছি। খুবই আনন্দ পাচ্ছি। মেলার কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি, হাতের সংখ্যা কমে গেছে। মানে সবার হাতে সবার হাত নেই। কেউ কেউ ছিটকে গেছে। ভয় পেলাম। বের হওয়ার কোনো পথ পাচ্ছি না। মেলার দরজাও খুঁজে পাচ্ছি না। এর মধ্যে আমরা কয়েকজনকে মেলার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি! কান্না আসছে। আমার খালার ভাশুরের ছেলে কীভাবে যেন আমাদের দেখেছেন। তিনি কাছে এসে বললেন, ‘এই তোমরা কার সঙ্গে এখানে এসেছ?’
আমাদের মুখে কোনো কথা নেই। ভয়ে আর একটু হলে কেঁদেই ফেলতাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি আমাদের সবাইকে খুঁজে বের করে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করলেন। আর বাড়ি ফেরার পর যা হওয়ার তা-ই হলো। বাবা-মা দুজনে মিলে আচ্ছা রকম বকা দিলেন। এর পর থেকে আমার ওপর বাড়ির সবার নজরদারি বেড়ে গেল। ওই দিনের কথা মনে হলে এখনো খুব হাসি পায়।
২.
তখন সবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছি। কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিটি তখনো মুক্তি পায়নি। দোলা নামে একটি ছবিতে আমার সহশিল্পী সানী। এটা ছিল সানীর সঙ্গে প্রথম কাজ। ছবিটির একটা দৃশ্যে পরিচালক আমাকে বললেন, ‘মৌসুমী, এবার তোমার ক্লোজ শট নেওয়া হবে। তুমি আগের শটের কিউ ধরে সংলাপ দেবে।’ প্রথম প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করছি। চলচ্চিত্রের ছোটখাটো অনেক ভাষা তখনো আমি বুঝে উঠতে পারিনি। তার পরও আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলাম। দৃশ্যটি ধারণের সব প্রস্তুতি শেষ। পরিচালক ১..২...৩..গুনেই ‘অ্যাকশন’ বললেন। দৃশ্য ধারণ চলছে। আমি সংলাপ না বলে সানীকে জিজ্ঞাসা করছি, ‘সানী ভাই, কিউ বিষয়টি কী?’ আমার এ অবস্থা দেখে পরিচালক ‘কাট কাট কাট’ বলে চিৎকার করে দৃশ্য ধারণ বন্ধ করলেন। ইউনিটের সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন। আমি একটু লজ্জা পেলাম। সেদিনকার ওই দৃশ্যের কথা মনে পড়লে এখনো হাসি আসে।

মান্না ভাইয়ের চিৎকার: নিপুণ
তখন আমার বয়স ছয়-সাত হবে, ছোট ভাইয়ের বয়স দুই কি তিন। একদিন বাসায় বাবা আমাকে আর ছোট ভাইকে পাশে বসিয়ে মজার মজার গল্প করছিলেন। পাশেই টেবিলে একটা ঝুড়িতে আঙুর ছিল। একটা আঙুর ছোট ভাইয়ের মুখে তুলে দিলেন বাবা। আমি কী করলাম, ছোট ভাইয়ের মুখের মধ্যে আঙুল দিয়ে ওই আঙুরটি বের করে এনে নিজেই খেয়ে ফেললাম। বাবা তো রাগ করে বসলেন। বললেন, ‘এইটা তুমি কী করলা? আরও তো আঙুর আছে, ওখান থেকে তো খেতে পারতা।’ আমি বললাম, ‘ওখান থেকে খাব না। আমি ওর মুখেরটাই খাব।’ হা-হা-হা।
ছোটবেলার ঘটনাটার কথা মনে হলে হাসি এসে যায়।

২.
আরেকটি হাসির ঘটনা খুব মনে পড়ে। সেটা চলচ্চিত্রে। রিকশাওয়ালার প্রেম ছবির শুটিংয়ের ঘটনা। আমার সহশিল্পী মান্না ভাই। শুটিংয়ের অনেকগুলো দৃশ্যে দেখা যাবে আমি মান্না ভাইয়ের পিঠের ওপর পা দিয়ে রিকশায় চড়ি। প্রথম দিন এ দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে বাধল হুজ্জত। রিকশা সামনে। মান্না ভাই পিঠ পেতে দিয়েছেন আমাকে ওঠার জন্য। আমার পায়ে বুট। চলচ্চিত্রে তখন আমি নতুন। কৌশলও কম বুঝি। আমি লাফ দিয়ে পিঠের ওপর চড়ে রিকশায় উঠব। এমন জোরে ভর করে পিঠের ওপর উঠেছি, মান্না ভাই রীতিমতো চিৎকার দিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন। ওদিকে আমি উল্টে পড়ার উপক্রম। মান্না ভাই উঠে কোনোমতে আমাকে ধরে ফেলেছেন।
কাট হয়ে গেল দৃশ্য। এরপর মান্না ভাই পায়ের সামনের অংশে ভর করে পিঠে পা রেখে রিকশায় ওঠার কৌশল শিখিয়ে দিলেন। যতবার শেখাচ্ছেন, ততবারই ওই আগের ঘটনাই ঘটছে। বুটের চাপে মান্না ভাইয়ের পিঠের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। এভাবে বিশবার ধারণের পরও যখন দৃশ্য ওকে হলো না, তখন মান্না ভাই আমাকে বললেন, ‘এত কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি প্রথম যেভাবে পিঠের ওপর পা রেখে রিকশায় উঠতে গিয়েছিলে, ওভাবেই ওঠো। কষ্ট হলে একবারই হোক।’
ওই দিনকার শুটিংয়ের কথা মনে হলে খুব হাসি পায়।

তিন ঘা বেত: শাকিব খান
তখন স্কুলে পড়ি। সম্ভবত ষষ্ঠ কি সপ্তম শ্রেণীতে। শিশির নামে আমাদের এক বন্ধু ছিল। ক্লাসে ও নিজেকে নেতা নেতা ভাব দেখাত। সব কাজেই ওর নাক গলানোর অভ্যাস ছিল। একদিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ফন্দি আঁটলাম, শিশিরের এই মাতব্বরি ঠেকাতেই হবে। আমাদের স্কুলের পাশের গ্রামে মোবারক নামে এক পাগল থাকত। প্রায়ই স্কুলের পাশে ঘুরঘুর করত। আমরা বুদ্ধি করলাম, ক্লাস চলার সময়ে পেছন থেকে সাদা কাগজে ‘মোবারক’ লিখে শিশিরের পেছনে হালকা করে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেব। কথামতো কাজ। ক্লাস শেষ হয়েছে। শিশির স্কুলে ঘোরাঘুরি করছে। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ‘মোবারক মোবারক’ বলে আওয়াজ করছে। হাসাহাসি করছে। তখনো সে বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু তাকে ঘিরে কিছু একটা হয়েছে, তা সে মনে মনে আন্দাজ করতে পারছে। এক সময় আমাদের আরেক বন্ধু ওর পিঠ থেকে মোবারক লেখা কাগজটি ছিঁড়ে ওকে দেখাল। শিশির তো রেগেমেগে অস্থির। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। কে ওর সঙ্গে এই রসিকতা করেছে, তা মনে মনে সে খোঁজা শুরু করেছে। আমরাও ওর সঙ্গে তাল দিয়ে যাচ্ছি, ‘দোস্ত, এ ঘটনা কে ঘটাল? খুঁজে বের করতেই হবে। আমরাও তোকে সাহায্য করব।’
এভাবে দু-চার দিন গেল। আমরা সেই কয়েকজন বন্ধু যুক্তি আঁটলাম, আবারও এ ঘটনা ঘটাতে হবে। আবারও কথামতো সব প্রস্তুতি শেষ। ক্লাস চলছে। পেছন থেকে এক বন্ু্ল শিশিরের জামায় কাগজটি আটকাতে গিয়েই ধরা পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে শিশির ক্লাসের স্যারকে বিচার দিল। আমাদের দলে কয়জন আছে, তাও বেরিয়ে গেল। বিচারস্বরূপ আমাদের তিন ঘা করে বেত আর ক্লাস চলাকালীন পুরো সময় বেঞ্চের ওপর কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এখনো এ ঘটনা মনে হলে হাসি চলে আসে। হি-হি-হি...।

‘ও বাবাগো, ও মাগো’: রিয়াজ
সালাহউদ্দিন লাভলুর মোল্লাবাড়ীর বউ ছবিতে শাবনূর আর মৌসুমী দুজনই আমার বউ। এ টি এম শামসুজ্জামান আমার বাবা। একটা দৃশ্যে মৌসুমী আমাকে পুকুরের পানিতে চোবাবে। আমি কোনোমতে তার হাত থেকে বের হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ঘরে ঢুকে এ টি এম শামসুজ্জামানের কাছে বলব, ‘বাবা বাবা, তোমার বেটার বউ আমাকে পানিতে চোবাল কেন?’ দৃশ্যটির কথা শুনে এ টি এম শামসুজ্জামান বললেন, ‘ওভাবে না। আমি নামাজে থাকব, তুমি এসেই আমার গায়ের ওপর লাফ দিয়ে পড়েই সংলাপগুলো বলবে।’ আমি বললাম, ‘গায়ের ওপর পড়লে তো আপনি ব্যথা পাবেন।’ উনি বললেন, ‘আরে কিচ্ছু হবে না। তুমি করেই দেখো না।’
আমি তাঁর কথামতো পুকুর থেকে উঠে দৌড়ে ঘরে ঢুকেই ‘বাবা বাবা’ চিৎকার করে তাঁর গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। পড়ার পর দুজনই ‘ও বাবাগো ও মাগো’ বলে গড়াতে গড়াতে ঘরের বাইরে এসে পড়লাম। ততক্ষণে আমরা দুজনেই ক্যামেরার বাইরে চলে এসেছি। দৃশ্যটি কাট হয়ে গেল। কিন্তু এ টি এম শামসুজ্জামানের কাতরানি তখনো থামেনি। সত্যি সত্যি তিনি ব্যথা পেয়েছেন। দৃশ্যটি পুনরায় ধারণের জন্য পরিচালক হাঁক দিলেন। আমি আগের মতো করেই দৃশ্যটি করব কি না, তা জানার জন্য এ টি এম শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করলাম। শুনেই আঁতকে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘ওরে বাবারে... আর না, আর না। এভাবে আর কোরো না। এবার আমার গায়ের ওপর পড়লে তো আমি মরেই যাব।’
পুরো শুটিং ইউনিটের হাসতে হাসতে পেটে খিল। এখনো ওই দৃশ্যের কথা মনে হলে হাসি পায়।

‘বাসায় ফিরে ভাত খাচ্ছি’: পূর্ণিমা
অনেক দিন আগের কথা। সাল মনে নেই। মনোয়ার হোসেন খোকনের একটি চলচ্চিত্রে কাজ করছি। গুলশানের ওহাব সাহেবের বাড়িতে শুটিং চলছে। বিকেল হয়ে আসছে। ছবিতে আমি আর বাবা দুজনে রিকশায় করে বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরব—এমন কিছু দৃশ্য ধারণ করবেন পরিচালক। আমি আর বাবার চরিত্রে যিনি অভিনয় করছিলেন, দুজনে মিলে রিকশায় করে ঘুরছি। পরিচালক দৃশ্য ধারণ করছেন। আমাদের রিকশার পেছন পেছন দূরত্ব রেখে আমার গাড়িও আসছে। দৃশ্যগুলো ধারণ শেষ হলে মনোয়ার খোকন আমাকে বললেন, ‘পূর্ণিমা, তুমি বাসায় চলে যাও।’ গাড়ি রিকশার পেছনেই ছিল। আমি গাড়িতে করে আমার বাসায় চলে আসি। মেকআপ তুলে ফ্রেশ হয়ে কেবল খেতে বসেছি, এর মধ্যে পরিচালকের ফোন, ‘তাড়াতাড়ি হাউসের বাইরে এসো। দৃশ্য ধারণের প্রস্তুতি সব শেষ। এখনই কাজটি করে ফেলি, সূর্য চলে যাচ্ছে।’
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। বললাম, ‘মানে, খোকন ভাই, আমি তো বাসায় চলে এসেছি। ভাত খাচ্ছি। আপনি তো আমাকে বাসায় চলে যেতে বললেন।’
শুনেই পরিচালক বলে উঠলেন, ‘বলো কী! তুমি বাসায় মানে...আমি তো তোমাকে শুটিংয়ের বাসায় যেতে বলেছি।’
আমি তো হাসতে হাসতে শেষ। সেদিন আর শুটিং করা হয়নি। প্যাকআপ। ঘটনাটার কথা মনে হলে এখনো একা একাই হেসে ফেলি।

পেটে তখন খিদে: জয়া
স্কুল পেরিয়ে সবে ইন্টারমিডিয়েটে উঠেছি। কেমন যেন সবকিছু নতুন নতুন লাগে। তখন আমি বোধ হয় একটু বোকাপ্রকৃতির ছিলাম। বড় হয়েছি মায়ের কড়া অনুশাসনের মধ্যে। স্কুল-কলেজে তিনিই সব সময় আনা-নেওয়া করতেন আমাকে। ফলে একা একা তেমনভাবে বাইরে কোথাও যাওয়া হতো না। একবার আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে তার আত্মীয়ের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেলাম। দাওয়াত পেয়ে আমি তো মহা খুশি। আমি ও লিজা—দুই বন্ধু মিলে যাব।
অনুষ্ঠানের দিন বেরিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। নিজেদের যেন স্বাধীন মনে হচ্ছে। এরপর সন্ধ্যায় গেলাম দাওয়াতে। ততক্ষণে আমি ও লিজা দুজনেই ভীষণ ক্ষুধার্ত। ওদের বাড়ি পৌঁছে গায়েহলুদের মঞ্চের কাছে না গিয়ে আগে খেতে বসলাম আমরা। সারি সারি টেবিলে খাচ্ছেন সবাই। আমরাও গিলছি হাপুসহুপুস। একেক পদ আসছে, আর খাচ্ছি—কোনো দিকে খেয়াল নেই।
খাবারের শেষ পর্যায়ে এল ডাল। থালাভর্তি ডাল নিলাম আমরা। বিপদটা ঘটল তখনই। অন্যান্য খাবার হাত দিয়ে খেয়েছি, কিন্তু ডাল তো আর হাত দিয়ে খাওয়া যাবে না—খেতে হবে চুমুক দিয়ে। এত লোকের মধ্যে চুমুক দিয়ে ডাল খাব, বিষয়টা কেমন দেখাবে, কে কী বলবে—এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। এদিকে পেটে তখনো খিদে। আমি ও লিজা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। কী করব এখন, প্লেট রেখে উঠে যাব? অবশেষে হাত দিয়েই খেতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু ডাল কি আর হাত দিয়ে খাওয়া যায়!
ঘটনাটি মনে হলে অজান্তেই হাসি পায় এখনো। ভাবি, কী বোকা-ই না ছিলাম সে সময়!

পণ্ডিত ছোট ভাই: ন্যান্সি
তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়ের একটা ঘটনা।
আমি আর আমার বড় ভাই দুজন পিঠাপিঠি। স্বাভাবিকভাবে যা হয়, পিঠাপিঠিদের মধ্যে খুনসুটি, ঝগড়া সব সময় একটু বেশিই হয়ে থাকে। ভাইয়ার একটা অভ্যাস ছিল, আমি পরার আগেই আমার নতুন যেকোনো জামা পরে ফেলা; সেটা ফ্রক, সালোয়ার যা-ই হোক না কেন। এই প্রতিযোগিতার কারণে আমিও সুযোগ পেলেই শার্ট, গেঞ্জি—ওর নতুন যেকোনো কাপড় পরতাম। একবার ঈদে একটা ফন্দি আঁটলাম। ভাইয়া ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই না গোসলের জন্য বাথরুমে ঢুকল, অমনি ওর সব নতুন কাপড় লুকিয়ে রেখে দিলাম আমি। ভাইয়া তো বাথরুম থেকে বেরিয়ে রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা, থতমত খেয়ে গেল!
এবার আমি তাঁকে পরার জন্য এগিয়ে দিলাম আমার নতুন একটা জামা! আর বললাম, আমার সব নতুন জামা তো তুমিই আগে পরো। নাও, এটাও পরো। এটা পরে নামাজে যাও। তখন ভাইয়ার চেহারাটা ছিল দেখার মতো! নিজের পোশাকের জন্য তাঁর সে কী অনুনয়-বিনয়! আমিও নাছোড়বান্দা। সময় গুনে এক ঘণ্টা অবধি বসিয়ে রেখে পাঞ্জাবিটা বের করে দিলাম। ওর সেই কাঁচুমাচু চেহারাটা আজও মনে পড়ে।
এ রকম ঘটনা আছে ছোট ভাইয়ের সঙ্গেও। আমাদের ‘পণ্ডিত’ ছোট ভাই। যেকোনো বিষয়ে পণ্ডিতি করা তার স্বভাব! একবার ভাবলাম, তার পণ্ডিতি ছুটানো দরকার। তাই যথারীতি আবারও ফন্দি। করলাম কী, এক ঈদে ওর জন্য কিনলাম মেয়েদের একটা ফতুয়া। বাসায় এসে বললাম, তোর জন্য বেশ ভালো একটা গিফট আছে। ঈদের দিন দেব। কথানুযায়ী ঈদের দিন ওকে বের করে দিলাম সেই ফতুয়াটা। সে বলল, এটা বোধ হয় মেয়েদের ফতুয়া। আমি তৎক্ষণাৎ ঝাড়ি দিলাম, পোশাক সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা আছে! এটা হচ্ছে লেটেস্ট মডেলের ফতুয়া! এটা শুনে ও হাসিমুখে ফতুয়াটা গায়ে জড়িয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। বিকেলে দেখি ও মুখ গোমড়া করে বাসায় ফিরছে। বেচারাকে নাকি বন্ধুরা ইচ্ছামতো ঠাট্টা করেছে। এই ঘটনাগুলো যখন মনে পড়ে, তখন না হেসে পারি না।

ভিক্ষুকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক: চঞ্চল চৌধুরী
মজার স্মৃতিচারণার প্রতি আমাদের দুর্বলতা সব সময়ের। এই তো কয়েক দিন আগে ঘটে গেল আরেক মজার কাণ্ড। গাজীপুরের পুবাইলে ঈদের নাটকের শুটিং করছিলাম। নাটকের নাম শখের আশি তোলা। নাটকটি রচনা করেছেন বৃন্দাবন দাস। বিটিভির ঈদের নাটক হিসেবে ফরিদুর রহমানের পরিচালনায় এটি তৈরি করা হয়েছে। নাটকে আমি একজন ভিক্ষুকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। আমার সঙ্গে আরও দুজন ভিক্ষুকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, স্বাধীন খসরু ও ফারুক হোসেন।
পুবাইল রেলস্টেশনে তিনজন ভিক্ষা করি। দূরে ক্যামেরাটা লুকিয়ে রাখা ছিল। ট্রেন আসে। লোকজনের ভিড়। অনায়াসে ভিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু দু-একজন যখন চিনতে পারল, তখন তারা ভিক্ষা দিয়ে হ্যান্ডশেক করতে লাগল। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিয়ে আবার তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক—ভাবা যায়! কেমন মজার কাণ্ড! সত্যিই এক ইউনিক ব্যাপার।
তারপর আমরা তিনজন মাথা লুকিয়ে ফেললাম, শুধু থালাটা বাড়িয়ে দিতাম। প্রচুর ভিক্ষা পেতে থাকলাম। ১০, ২০ টাকা করে অনেক নোট। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ৫০০ টাকা ভিক্ষা পেলাম। তারপর তা দিয়ে শুটিং ইউনিটে প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হলো। মজার ঘটনা বটে, কিন্তু জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো।

ধপাস!: তিশা
ছোটবেলা থেকেই আমার মাথায় ছিল সিনেমার পোকা। সাজগোজ খুব পছন্দ করতাম। ভাবতাম, বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হয়ে গেছি আমি। সুযোগ পেলেই সিনেমা দেখি। বাসার বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একা সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মতো ভাবভঙ্গি করি। কখনো নিজেকে মনে হয় ববিতা, কখনো ভাবি, মাধুরী হয়ে গেছি!
সিনেমায় দেখতাম গান গাইতে গাইতে নায়ক-নায়িকারা নানা রকম অভিব্যক্তি করে—পাহাড়ের ওপর ওঠে, গাছের ডাল ধরে ঝোলে। তাদের দেখাদেখি বাথরুমের টাওয়েলস্টান্ডকে গাছের ডাল ভেবে সেখানে ঝুলতাম আমি। ঝুলতে ঝুলতে মনে মনে কত যে গানের কলি আওড়াতাম! একদিন বাথরুমের টাওয়েলস্টান্ডে ঝুলে মনের সুখে গান গাইছি। এর মধ্যে একটি শব্দ হলো—ধপাস! ঘটনা কী? নায়িকাবেশী আমার ঝোলাঝুলির অত্যাচারে ভেঙে গেছে টাওয়েলস্টান্ড! এভাবে অনেকবারই টাওয়েলস্টান্ড ভেঙেছি আমি।
আবার নায়িকাদের মতো করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল শুকানো, চুল ঝাঁকানোও ছিল আমার নিয়মিত রুটিনের একটি। এটি করতে খুব ভালো লাগত আমার। কিন্তু কাজটি করার সময় আমার চুলের ঝাঁকুনিতে মাঝেমধ্যেই বাথরুমের বাতি যেত ভেঙে। ঘটনাগুলো মনে হলে হাসি পায় আজও।
ছেলেবেলায় সিনেমার নায়িকা হতে চাইতাম। পরে সেই বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি আমি। আসলে জীবনটা বড়ই মজার, কখন কী ঘটে কিছুই বলা যায় না।

বখাটে ও বাঁদর: আরফিন রুমী
ছেলেবেলায় ভীষণ দুষ্টু ছিলাম। আমি পড়ি চতুর্থ শ্রেণীতে, আর আমার বড় ভাই পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া। দুই ভাই মিলে পুরোনো ঢাকার রায়সাহেব বাজারে কত যে দুষ্টুুমি করেছি, মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।
টেলিভিশনের অ্যান্টেনাকে বলতাম অ্যারিয়াল। পাড়ার কারও ওপর রেগে গেলে গোপনে তাদের অ্যারিয়ালের তার কেটে দিতাম, যাতে তারা টিভি দেখতে না পারে। পরে কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলে এমন ভাব করতাম, যেন কিছুই জানি না। পাড়ায় একসময় উঠতি বখাটেদের উৎপাত খুব বেড়ে গেল। একবার এদের কয়েকজন আমাদের বাড়ির ছাদের এক কোণে কিছু নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রাখল। কিন্তু এমনই দস্যি আমরা, কিছুই লুকোনো সম্ভব নয় আমাদের কাছ থেকে। এগুলো যে নিষিদ্ধ দ্রব্য, ছোট হলেও তা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম।
ওই বখাটেরা আমাদের চেয়ে বয়সে বড় হলেও, আমরা এত দুরন্ত ছিলাম যে কাউকেই ভয় পেতাম না। তাই আমি আর আমার বড় ভাই চুপি চুপি মাদকগুলো নিয়ে ফেলে দিলাম বাড়ির পাশের নর্দমায়। এরপর ওই ছেলেগুলো আমাদের ছাদে এসে ইতিউতি খুঁজতে থাকে। আর আমরা ভালো মানুষের মতো মুখ করে বলি, ‘কী খোঁজেন ভাই?’ তারা বলে, ‘একটা জিনিস রেখে গিয়েছিলাম, তোরা চিনবি না।’ আমরা আবার বলি, ‘কী জিনিস?’ তখন তারা তো ওই মাদকের নামটি আর বলতে পারে না আমাদের। সবকিছু বুঝে মিটিমিটি হাসি আমরা। একসময় তাদের বললাম, ‘আমাদের এখানে অনেক বানর আছে তো, ওরাই বোধ হয় পছন্দ করে আপনাদের জিনিসগুলো নিয়ে গেছে।’ তারা কী বুঝল, জানি না। মুহূর্তে কালো হয়ে গেল সবার মুখ। ফিরে গেল তারা। আমাদের মতো ‘বাঁদর’কে ধরা তাদের কম্ম নয়—এই ভেবে আমরা দুই ভাই তো তখন হেসেই লুটোপুটি...।

No comments

Powered by Blogger.