দুর্ভোগ সঙ্গী করে আনন্দযাত্রা by মোছাব্বের হোসেন

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখী মানুষ। গতকাল বুধবার এই চাপটা ছিল আরও বেশি। সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে হাজারো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যায়। তবে ঈদের আনন্দযাত্রায় দুর্ভোগ ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।


তীব্র যানজটের কারণে গাড়ি সময়মতো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। এর মধ্যে থেমে ছিল না বাড়তি ভাড়া আদায়ও।
গতকাল সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। শরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, তিনি ইউনিক পরিবহন থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম গন্তব্যের টিকিট কিনেছেন ৪৩০ টাকা দিয়ে। অথচ ঈদের আগেও এই ভাড়া ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার কোনো তালিকাও কাউন্টারে ছিল না।
ইউনিক পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা ইলিয়াস দাবি করলেন, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। আর তালিকার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
সায়েদাবাদের অধিকাংশ কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা দেখা যায়নি। জানতে চাইলে ঢাকা-নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর গন্তব্যে চলাচলকারী ইকোনো পরিবহন সার্ভিসের ব্যবস্থাপক আরিফ রহমান বললেন, তাঁরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে মাত্র ১৫ টাকা বেশি নিচ্ছেন।
বেশি ভাড়া আদায়ের সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে ‘বকশিশ’ আদায়। সায়েদাবাদের শ্যামলী কাউন্টার থেকে আবু তাহের নামে এক যাত্রী চট্টগ্রামের টিকিট কাটেন। টিকিটের গায়ে দাম লেখা ছিল ৪৩০ টাকা। কিন্তু কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো. রাজু ৫০০ টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে তিনি টিকিট দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আবু তাহের তখন বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকার নোট দিলে তাঁকে ২০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মো. রাজু বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেই না, চায়া নিই। অনেকে খুশি হয়ে বকশিশ দেয়।’
বাড়তি ভাড়াসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সায়েদাবাদ আন্তজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ১৪ আগস্ট কুমিল্লাগামী তিশা পরিবহনের একটি বাসের কর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়ে তাঁরা সেখানে গিয়ে বাড়তি ভাড়া ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সায়েদাবাদে অনিয়ম ঠেকাতে তাঁরা সচেষ্ট বলে জানান।
সময় মেনে বাস আসছে না: রাস্তায় তীব্র যানজট থাকায় সময়মতো কাউন্টারগুলোতে বাস আসতে পারছে না। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে অপেক্ষা করতে হয়। সায়েদাবাদের সেবা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামের গতকালের টিকিট দেওয়া হলেও শুধু বাস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। সময় উল্লেখ করা হয়নি। সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন, এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে টিকিট কিনে তিনি বিপাকে পড়েছেন। সেবা বাসের কাউন্টার থেকে বলা হয়, যানজটের কারণে বাস কখন কাউন্টারে আসবে তাঁরা বলতে পারছেন না।
পানি-কাদায় দুর্ভোগ: গোটা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ময়লা পানি ও কাদায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঘরমুখী মানুষকে। কাপড় গুটিয়ে, ময়লা পানি ও কাঁদা মাড়িয়ে টার্মিনালে আসতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নারী ও শিশুরা।
গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাপুরে যেতে পরিবার নিয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসেছেন মাহাবুব আলম নামের এক ব্যবসায়ী। জানালেন, স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলেকে নিয়ে টার্মিনালে এসেছেন। মাহাবুব বললেন, ‘বার বার ভয় হচ্ছিল কখন পড়ে যাই।’

No comments

Powered by Blogger.