ঈদের কেনাকাটা- জাকাতের শাড়ির দাম বেশি, লুঙ্গির কম by আশীষ-উর-রহমান

অবস্থাপন্ন প্রতিবেশীরা শহর থেকে বাড়ি আসবেন। অসচ্ছল প্রতিবেশীর হাতে তুলে দেবেন নতুন কাপড়। তা পরেই ঈদ করবেন সামর্থ্যহীন এসব মানুষ। আর নতুন কাপড় মানে আনন্দ। সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে এ এক অনন্য উপায়। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে করা যায় এই অনন্য সাম্য রচনা।


ধর্মীয় বিধান অনুসারে, বিত্তবানদের তাঁদের সম্পদের ওপর নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ জাকাত দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। বছরের যেকোনো সময়েই এ কর্তব্য সম্পন্ন করা যায়। তবে রমজান মাসে দান-খয়রাতের মর্তবা বেশি বলে এ সময়টাতেই অধিকাংশ লোক জাকাত দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে অর্থের পাশাপাশি দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। এতে ঈদের দিনে দরিদ্র মানুষ অন্তত একটি নতুন পোশাক পরতে পারেন।
অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি জাকাতের জন্য বেশি পরিমাণে শাড়ি-লুঙ্গি কিনে থাকেন বলে রমজান মাসে মাঝারি থেকে মোটা কাপড় ও লুঙ্গির বিক্রিও বেড়ে যায়। অনেক কাপড়ের দোকানে ‘এখানে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি পাওয়া যায়’ লেখা বোর্ডও ঝুলতে দেখা যায়। জাকাতের কাপড় বলতে আসলে কোনো বিশেষ ধরনের কাপড় নেই। দাতারা চেষ্টা করেন অধিক সংখ্যক লোকের মধ্যে মোটামুটি মানসম্পন্ন কাপড় বিতরণ করতে। সে কারণে তুলনামূলক কম দামে ক্রেতাকে দেওয়া যায় এমনভাবেই তৈরি করা হয় এসব কাপড়-লুঙ্গি।
রাজধানীর পোশাকের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জাকাতের জন্য সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাপা সুতি শাড়ি এবং পাঁচ হাত বহরের লুঙ্গিই নির্বাচন করেন ক্রেতারা। শাড়ির দাম নিম্নে ২৮০ টাকা এবং লুঙ্গি ১৬০ টাকা। দোকান ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শাড়ির দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে আশ্চর্য মনে হলেও লুঙ্গির দাম কম।
গুলিস্তানের পীর ইয়েমেনী মার্কেটে জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গির বিরাট খুচরা বাজার। দুই শতাধিক শাড়ি-লুঙ্গির দোকান আছে এখানে। ব্যবসায়ী সমিতির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এহসানুল হকের দোকানের নাম লাকী শাড়ি বিতান। তিনি জানালেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাপা শাড়ি আছে। এর মধ্যে কেয়া প্রিন্ট ও আপন প্রিন্ট শাড়ির দাম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এর চেয়ে একটু ভালো মানের শাড়ির দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এর মধ্যে আছে জনি প্রিন্ট, বি-প্লাস প্রিন্ট, বনফুল প্রিন্ট—এসব প্রতিষ্ঠানের শাড়ি। প্রাইডের ছাপা শাড়ি ৪৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
তবে অন্য মার্কেটে জাকাতের জন্য ছাপা শাড়ি কিনতে গেলে দাম কিছুটা বেশি পড়ছে। নয়াপল্টনের সিটিহার্ট মার্কেটের মায়ের আঁচল-এর ব্যবস্থাপক বলরাম মৃধা জানালেন, জাকাতের শাড়ির দাম ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। গাউছিয়া মার্কেটের মনিহার শাড়ির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মাদ শাহজাহান জানালেন, জাকাতের জন্য টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িও অনেকে কেনেন। এসব শাড়ির দাম ন্যূনতম ৫০০ টাকা। ৭০০ টাকার মধ্যে তাঁতের ভালো শাড়ি পওয়া যায়।
মোটা সুতার পাঁচ হাত মাপের লুঙ্গির দাম তুলনামূলক কম। পীর ইয়েমেনী মার্কেটের রনী লুঙ্গি বিতানের বিক্রয় ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বললেন, লুঙ্গি তৈরি হয় সাধারণত পাবনা ও রুহিতপুরে। দাম কমার কারণ, লুঙ্গির উৎপাদন হয়েছে এবার প্রচুর। সে তুলনায় বিক্রি কম। গতবার জাকাতের লুঙ্গির দাম ছিল নিম্নে ১৮০ টাকা, এবার ১৬০ টাকা। এবার মোটামুটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে বেশ ভালো মানের লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ছয় হাত মাপের চিকন সুতার লুঙ্গির দাম গতবারের তুলনায় বেড়েছে। এসব লুঙ্গির দাম ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঈদের কেনাকাটা পর্ব প্রায় শেষ। গতকাল বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে বাড়ি যাওয়ার পালা। রাজধানীতে ইতিমধ্যে নিরিবিলি পরিবেশ ফিরে এসেছে। অপেক্ষা এখন ঈদের দিনটির জন্য।

No comments

Powered by Blogger.