বেড়ার প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকসংকট

পাবনার বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকসংকট বিরাজ করছে। এসব বিদ্যালয়ের নয়টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে সহকারী শিক্ষকের ৭১টি পদ।


শিক্ষকসংকটের কারণে প্রত্যন্ত ও চর এলাকার বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে দুই থেকে তিনজন শিক্ষক দিয়ে। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোয় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ৪৩৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের নয়টি পদসহ মোট ৮০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর ওপর ৩৩ জন শিক্ষক এক বছরের জন্য প্রশিক্ষণে থাকায় প্রকৃতপক্ষে কর্মরত আছেন ৩২৫ জন। যে পদগুলো ফাঁকা রয়েছে, এর প্রায় সবই উপজেলার প্রত্যন্ত ও চর এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের। এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগেই শিক্ষক রয়েছেন দুই থেকে তিনজন করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যন্ত ও চর এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা তদবির করে উপজেলা সদরে চলে আসায় সেখানে শিক্ষকসংকট থেকেই যাচ্ছে। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেড়ায় অন্য উপজেলার ২৪ জন শিক্ষক কর্মরত ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা এক আদেশে গত অক্টোবর মাসে এসব শিক্ষক একযোগে তাঁদের নিজ নিজ উপজেলায় বদলি হওয়ায় শিক্ষকসংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে উপজেলার ঢালারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের চারটি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন দুজন। ২৬৩ জন শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষক থাকলেও একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় আপাতত এখানে আমরা দুজন আছি। দুজনের পক্ষে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সব ক্লাস নেওয়া দুঃসাধ্য। তার পরও ক্লাস চালিয়ে নিতে হচ্ছে।’
বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঠদানের বাইরেও শিক্ষকদের প্রায়ই সরকারি নানা কাজে বাধ্যতামূলক ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই এ দায়িত্ব পালনকালে তাঁদের পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়। এ ছাড়া এসব কাজের বাইরেও প্রত্যেক প্রধান শিক্ষককে প্রতি মাসে ছয়-সাতটি কর্মদিবসে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে দাপ্তরিক প্রয়োজনে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আবার বিভিন্ন কর্মশালা ও সভায় প্রধান শিক্ষকদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, শিক্ষকস্বল্পতার এ অবস্থায় শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারি কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই দিলে ভালো ফল পাওয়া যেত।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও দুর্গমতার কারণে অনেকেই সেখানে থাকতে চান না। ওপর মহলে তদবির করে তাঁরা সেখান থেকে সুবিধাজনক স্থানে চলে আসেন। ইতিমধ্যে নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি, শিগগরিই আমরা শূন্য পদগুলোর বিপরীতে নতুন শিক্ষক পাব।’

No comments

Powered by Blogger.