'কুসুম, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে এক্ষুনি বাসায় নিয়ে চলো'

মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ মনোবলের দিক থেকে ছিলেন সদা সজীব, উচ্ছল ও আত্মপ্রত্যয়ী। তবে জীবনের শেষ মুহূর্তে কিছুটা মৃত্যুভীতির প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর কথায়। 'কুসুম, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, এক্ষুনি আমাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে চলো'- স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বলা তাঁর এই কথার মধ্য দিয়েই এমন ভীতির প্রকাশ ঘটে।


দীর্ঘ ১০ মাসের মতো সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মৃত্যুভীতি জয় করতে ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের পরও সাংঘাতিকভাবে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন যে মানুষটি, সেই মানুষটিই সপ্তাহের ব্যবধানে জীবনের শেষ সময়ে মৃত্যুভয়ে তাড়িত হতেন। এ জন্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত সপ্তাহ দুয়েক তাঁকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তবু শেষ রক্ষা হলো না। মৃত্যু নামের অপরাজেয় দানবকে পরাস্ত করতে পারলেন না সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদ।
ক্যান্সারের অস্ত্রোপচারের পর কয়েক দিন ধরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চেনা পৃথিবীর গণ্ডি ছেড়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমালেন তিনি। এ সময় লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ছোট ভাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ কয়েকজন স্বজন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়ে লেখকের দুই সন্তান নিনিত ও নিষাদকে কোলে নিয়ে নিউ ইয়র্কের ভাড়া বাসা থেকে হাসপাতালে ছুটে আসেন শাশুড়ি সংসদ সদস্য তোহরা আলীসহ ঘনিষ্ঠজনরা। মুহূর্তে আটলান্টিকের উভয় পারে লেখকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোক আর বেদনায় আচ্ছন্ন হয় তাঁর আত্মীয়স্বজন, অগণিত পাঠক, ভক্ত, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী।
বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সপরিবারে নিউ ইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। প্রথমে বিশ্ববিখ্যাত স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার হাসপাতাল এবং পরে বেলভ্যু হাসপাতালে তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। ১২টি থেরাপির পর চিকিৎসকরা তাঁর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। তা সফলও হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর গত ১৯ জুন তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। ইনফেকশন হয়েছিল অস্ত্রোপচারের এলাকায়। বিষয়টি ঘাবড়িয়ে দেয় চিকিৎসকদের। দ্বিতীয় পর্যায়ের অস্ত্রোপচারের পর লেখকের দৈহিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। কষ্ট হয় শ্বাস নিতে। কৃত্রিম ব্যবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের যত রকমের প্রক্রিয়া রয়েছে, এর মধ্যে যেটি সর্বোত্তম, তাও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদকে বাঁচানো গেল না।

No comments

Powered by Blogger.