এক দিনের সংঘাতে নিহত ৩০০-কয়েকটি সীমান্ত ক্রসিং দখল করেছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা

সিরিয়ার বিদ্রোহীরা গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর কাছ থেকে তুরস্ক ও ইরাক সীমান্তের কয়েকটি ক্রসিং (পারাপার এলাকা) দখল করে নেয়। যদিও ক্রসিংগুলোর কোনটি কতক্ষণ বিদ্রোহীদের দখলে ছিল, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। রাজধানীতে কয়েক দিনের লড়াইয়ের মধ্যে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর আত্মঘাতী হামলার এক দিন পরই এ ঘটনা ঘটল।


সিরিয়াজুড়ে সহিংসতায় বৃহস্পতিবার তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, যা সহিংসতায় এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানি।
সিরিয়ার সরকারবিরোধী সূত্রগুলো বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর দেশটির পূর্বাঞ্চলে ইরাক সীমান্তসংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ আবু কামাল ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নেয় বিদ্রোহীরা। এ ছাড়া তুরস্ক সীমান্তে বাব আল-হাওয়া এবং জারাব্লাস নামের দুটি পোস্টের নিয়ন্ত্রণও এখন বিদ্রোহীদের হাতে। সরকারবিরোধীরা দাবি করেছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি সেনা চৌকিতে আকস্মিক হামলার পর সেনা অধিনায়কসহ অন্তত ২০ জন সেনাকে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল ইরাকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সব কটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। দেশটির সরকার সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বাব আল-হাওয়া ক্রসিং এলাকা থেকে তোলা হিসেবে দাবি করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রতিকৃতিকে বিকৃত করছে। তবে, কিছু সময় পর এলাকাটি থেকে বিদ্রোহীরা চলে গেছে বলে জানা গেছে।
লন্ডনভিত্তিক সিরিয়াবিষয়ক মানবাধিকার সংগঠন দি সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক, ৯৮ জন সেনাসদস্য ও ৬৫ জন বিদ্রোহী রয়েছে। সংগঠনটির পরিচালক রামি আবদেল রাহমান বলেন, ‘প্রাণহানির এ সংখ্যা সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট এক দিনে সর্বোচ্চ।’
সিরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তাপ্রধান হিশাম ইখতিয়ার গতকাল হাসপাতালে মারা গেছেন। গত বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরো ভবনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি।
গতকাল সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, রাজধানী দামেস্কের মিদান এলাকা থেকে বিদ্রোহীদের উৎখাত করেছে সরকারি বাহিনী। যদিও অবজারভেটরি নামের সংগঠনটি দাবি করেছে, ওই এলাকায় লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের প্রস্তাবে রাশিয়া ও চীন আবারও ভেটো দেওয়ায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুখপাত্র জে কার্নি এ ভেটো দেওয়াকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাশার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া হবে ভুল। ভেটোর সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশ দুটিকে সিরীয় জনগণ কী চোখে দেখবে, তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। জে কার্নি মন্তব্য করেন, ‘ক্ষমতা থেকে বাশারের বিদায়ের ক্ষণ গণনা চলছে।’
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে জাতিসংঘ সনদের ৭ নম্বর পরিচ্ছেদ অনুযায়ী অসামরিক বিষয়ে অবরোধ আরোপ করার কথা বলা হয়েছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়ার বিরোধিতার কারণ তারা মনে করছে এ অবরোধের ধারাবাহিকতায় সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ থেকে যাবে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সিরিয়ায় অবস্থান করা জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের মেয়াদ বাড়ানো বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পর্যবেক্ষকদের তিন মাস মেয়াদের শেষ দিন ছিল গতকাল। এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.