নারী কোটা ১০ শতাংশ কমছে-প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে স্নাতক by মোশতাক আহমেদ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে পুরুষদের মতো নারী প্রার্থীদেরও ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে নারীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক। এ ছাড়া নারী কোটা ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে।


এসব বিষয় রেখে ১৯৯১ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১২’ ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। এখন সেটি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করার প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী করার কথা। সে ক্ষেত্রে এসএসসি পাস শিক্ষক দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এখন অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন নারী প্রার্থীও পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ানো হচ্ছে।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত শিক্ষক নিয়োগে উত্তীর্ণদের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ নারী শিক্ষক মাধ্যমিক পাস।
আগামী জুলাই মাসেই এই বিধিমালা সংশোধনের কাজ শেষ করা হতে পারে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ শিক্ষকদের জন্য আলাদা যোগ্যতার বিষয়টি বিলুপ্ত হবে। সেখানে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রি বা সমমানের হবে।
প্রস্তাবিত বিধিমালায় শিক্ষক নিয়োগে ৫০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা ও ৩০ শতাংশ পুরুষ কোটা রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটাগুলো এর মধ্য থেকেই করা হবে।
বর্তমানে ৬০ শতাংশ নারী কোটা এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা ও ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য আগে নারী কোটা বেশি করা হয়েছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতাও কম রাখা হয়েছিল। বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ৫০ দশমিক ২ শতাংশ নারী ও ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ। অর্থাৎ লিঙ্গ সমতা অর্জন হয়েছে। এ জন্য নারী কোটা ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। তবে পোষ্যসহ অন্যান্য কোটা থেকেও নারীরা শিক্ষক হয়ে আসেন। সুতরাং বাস্তবে ৫০ শতাংশেরও বেশিই হবে নারী শিক্ষক।
নিজ উপজেলার মধ্য থেকেই সব শিক্ষক নিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বিধিমালায়। তবে বিকল্প উপায়েও শূন্য পদ পূরণের প্রস্তাব থাকছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কম। দূরে পদায়ন হলে তাঁদের খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ঠিকমতো যেতে চান না। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়। নারী শিক্ষকদের সমস্যা আরও বেশি। এসব কারণেই নিজ উপজেলার মধ্য থেকেই শিক্ষক নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমান নিয়মে প্রথমে উপজেলার মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে পার্শ্ববর্তী অন্য উপজেলা থেকে, এরপর না পাওয়া গেলে অন্য জেলা থেকে একই শ্রেণীর (নারী হলে নারী, পুরুষ হলে পুরুষ, কোটার হলে কোটা) প্রার্থী দিয়ে পদ পূরণ করা হয়।
প্রস্তাবিত বিধিমালার অন্যান্য বিষয়গুলো মোটামুটি আগের মতোই থাকছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ালে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, আগে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন নারী প্রার্থী পাওয়া যেত না। এখন পাওয়া যায়। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক লাগবে। তারপরও আমি বলব, সুবিধাবঞ্চিত এলাকার জন্য এই বিষয়টি শিথিলযোগ্য রেখে বিধিমালা করা উচিত। কারণ, হাওরসহ সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন নারী প্রার্থী পাওয়া কঠিন হবে।’ নারী কোটা কমানোর প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, সংসদসহ বিভিন্ন জায়গায় যেখানে নারী কোটা বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে প্রাথমিকে নারী কোটা কমানো ঠিক হবে না।

No comments

Powered by Blogger.