তল্লাশি আইন কঠোরভাবে মানতে হবে-ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ সেজে ছিনতাই

কখনো সাদা পোশাকে, কখনো র‌্যাব-পুলিশের পোশাক পরে একশ্রেণীর দুর্বৃত্ত রাস্তাঘাটে লোকজনকে হয়রানি করে। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। মানুষ অসহায়। কারণ, র‌্যাবের নাম শুনলেই ভয়ে থাকতে হয়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে বা কিছু জিজ্ঞেস করলেই নির্যাতন শুরু হয়। বিষয়টি উদ্বেগজনক।


তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো খবর হলো, গত তিন মাসে এ রকম প্রায় ৬০ জন দুর্বৃত্তকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, পুলিশ-র‌্যাবের নকল পোশাক প্রভৃতি পাওয়া গেছে। তার মানে, কিছু অপরাধী অনায়াসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছদ্মবেশে অপরাধ করার সুযোগ পাচ্ছে। এদের বেশির ভাগই আগে পুলিশ বা র‌্যাবে চাকরি করত, বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হয়েছে। তার পরও তারা অবলীলায় পুলিশের বেশে অপরাধ করে যাচ্ছে কীভাবে, সে প্রশ্ন সংগতভাবেই তোলা যায়। যেহেতু এ ধরনের অপরাধ বহু বছর ধরে চলে আসছে, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আগেই নজরদারির প্রয়োজন ছিল। বরখাস্ত কর্মীরা কে কোথায় কী করছে, তার খোঁজখবর রাখা কঠিন নয়। এই সতর্কতা গ্রহণ করা হলে মানুষকে এভাবে পথেঘাটে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হতো না।
আইন প্রয়োগ করবে পুলিশ। তারা যদি সন্দেহভাজন কাউকে তল্লাশি বা গ্রেপ্তার করতে চায়, তাহলে যেসব আইন মেনে চলা দরকার, তা অনেক সময় তারা মানে না। এই অনিয়মের সুযোগ নিয়েই অপরাধী চক্র ভুয়া পুলিশ সেজে ছিনতাই করে। আইনে বলা হয়েছে, কাউকে তল্লাশি বা সন্দেহবশত জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে নিজেদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হয় না। সাদা পোশাকে তল্লাশি করা হয়। কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশির সময় সাক্ষীর উপস্থিতির কথা আইনে বলা আছে। কিন্তু এসব আইন সাধারণত মানা হয় না। এ ধরনের অনিয়ম চলছে বলে যখন দুর্বৃত্তরা এসে কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে, তখন তাঁর পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না যে ওই লোকগুলো আসল না নকল।
পুলিশ মানুষকে নিরাপত্তা দেবে। সেই পুলিশের পরিচয় যেন দুর্বৃত্তরা সহজে ব্যবহার করতে না পারে, তাই জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেউ ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় ব্যবহার করে কোনো দুর্বৃত্ত যেন অপরাধ করতে না পারে, সে জন্য পুলিশের কার্যকর ও ফলপ্রসূ নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.