নৌবাহিনীর প্রধান বললেন-সম্পদ আহরণ ও রক্ষণাবেক্ষণে সমুদ্র নীতিমালা দরকার

নতুন করে এলাকা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রে সম্পদ আহরণ এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেশে জাতীয় সমুদ্র নীতিমালা থাকা দরকার বলে মনে করেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জেড ইউ আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মত দেন।

নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, তিন বছর ধরে নৌবাহিনী নিজেদের মতো করে যেভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে, তা গত ৪০ বছরেও হয়নি। এতে করে এ বাহিনী আধুনিক নৌবাহিনীতে পরিণত হতে চলেছে।
নৌবাহিনীর সূত্র জানায়, সফররত ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এন এ কে ব্রাউনি গতকাল নৌবাহিনীর সদর দপ্তরে জেড ইউ আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা পারস্পরিক কুশল বিনিময় ও পেশাগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ব্রাউনি সেখান থেকে যাওয়ার পর সাংবাদিকেরা নৌবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের যে বিরোধ ছিল, তা আর নেই। ভারতের সঙ্গে যে বিরোধ আছে, তা-ও আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে সমুদ্রসীমা নিয়ে আর কোনো বিরোধ থাকবে না। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, নৌবাহিনীর জরিপ জাহাজ ‘অনুসন্ধান’ প্রযুুক্তির মাধ্যমে জরিপ করে সেই প্রতিবেদন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করেছে। নৌবাহিনী যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পদ্ধতি। এ পদ্ধতি আন্তর্জাতিক আদালত গ্রহণ করেছেন। এর সুফলও মিলেছে। তিনি বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে জরিপ জাহাজ কিনে দেওয়ার কারণে। সমুদ্রে জরিপ করার মতো কোনো জাহাজ ছিল না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নৌবাহিনীতে জরিপ জাহাজ যুক্ত হয়েছে।
নৌবাহিনীর জনবল বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে নৌপ্রধান বলেন, শুধু লোকবল বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। আগে দরকার আধুনিক যন্ত্রে নৌবাহিনীকে সজ্জিত করা। দশজন যা করতে পারে না, একটি যন্ত্র তা অনায়াসেই করে দিতে পারে। নৌবাহিনীর জন্য কী ধরনের সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে, এর জবাবে তিনি বলেন, চীন থেকে দুটি জাহাজ কেনা হচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে নৌবাহিনী নিজেই পাঁচটি ছোট আকারের যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে। এ ছাড়া জার্মানি থেকে একটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট কেনা হচ্ছে। আগামী দু-এক বছর পর এগুলো নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। তবে শুধু একটি বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ালে লাভ হবে না, একসঙ্গে তিন বাহিনীর ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আগ্রাসী তৎপরতামুক্ত কি না, জানতে চাইলে জেড ইউ আহমেদ বলেন, বিশাল সমুদ্র এলাকায় নজরদারি সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমুদ্র এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে টহল খুব জরুরি। মেরিটাইম এয়ারক্রাফট থাকলে তা খুব সহজেই করা সম্ভব। তিনি বলেন, নৌবাহিনী ২৪ ঘণ্টা সাগর পাহারা দিচ্ছে। এটা বাহিনীর নিয়মিত কাজেরই অংশ।
সমুদ্রসীমা মামলায় হেরে যাওয়ায় মিয়ানমার ক্ষুব্ধ কি না, জানতে চাইলে নৌপ্রধান সামপ্রতিক সময়ে তাঁর মিয়ানমার সফর তুলে ধরে বলেন, এ মামলার রায়ে দুই দেশই খুশি হয়েছে। তিনি বলেন, সমুদ্রে অফুরন্ত সম্পদ আছে, বের করে এনে কাজে লাগাতে হলে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনায় জোর দিতে হবে। এটা করতে পারলে পুরো জাতি এর সুফল পাবে।

No comments

Powered by Blogger.