সচেতনতা বাড়লে অনেক প্রাণ রক্ষা পাবে-নারীর প্রাণঘাতী ক্যানসার

বাংলাদেশে প্রতিবছর কত নারী স্তন ক্যানসার ও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, কতজন মারা যান—এর কোনো সামগ্রিক পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাবে, বছরে সাড়ে ১৩ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় সাড়ে ছয় হাজার।

স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বলা হচ্ছে বছরে ১৩ হাজারের কম, মারা যান গড়ে পাঁচ হাজার।
নারীদের মধ্যে হন্তারক ক্যানসারের প্রথমটি হচ্ছে স্তন ক্যানসার, দ্বিতীয়টি জরায়ুমুখের ক্যানসার। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র, নিরক্ষর, সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল নারীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা কম। শুধু তা-ই নয়, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নারীদের যেকোনো ধরনের অসুস্থতাকে আমলে নেওয়া হয় সবার শেষে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে মোট ২১৬টি প্রতিষ্ঠানে নারীদের স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয়ের একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এটি শুরু হয় ২০০৯ সালে। ১০ টাকার টিকিট কেটে একজন নারী স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসার পরীক্ষার সুযোগ নিতে পারেন। ব্যবস্থাটি যে এক বিরাট মহৎ উদ্যোগ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু খবরটি কতজন নারীর জানা আছে, সেটিই প্রশ্ন। সারা দেশের ২১৬টি প্রতিষ্ঠানে খুব স্বল্প খরচে এই সুবিধা গ্রহণ করে অনেক নারীই ক্যানসারে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যেতে পারেন। বিশেষত, জরায়ুমুখের ক্যানসার শুরু হওয়ার অন্তত ১৫ বছর আগেই পরীক্ষায় ধরা পড়ে ক্যানসারের আশঙ্কা। স্তন ক্যানসার দ্রুত ছড়ায়, তাই ২০ বছরের বেশি বয়সী সব নারীর নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করানো উচিত। সঠিক সময়ে রোগের লক্ষণ ধরা পড়লে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যানসারে অকালমৃত্যু ঠেকানো যায়।
এসব বিষয়ে প্রথমেই প্রয়োজন নারীদের নিজেদের সচেতনতা; দ্বিতীয়ত স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের উচিত নারীদের অসুস্থতাকে অবহেলা না করা, একদম শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো এ বিষয়ে গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.