পরিবেশক পদ্ধতির নিবিড় তদারকি প্রয়োজন-চিনি ও ভোজ্যতেল

চিনি ও ভোজ্যতেল—এই দুটি ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা লেগেই থাকে। অনেক কথাবার্তা, অনেক উদ্যোগের খবর পাওয়া যায়, কিন্তু অস্থিরতা দূর হয় না। বিশেষ করে, ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগ লেগেই রয়েছে।
পবিত্র রমজান মাস এলে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়।

এ বছর রমজান শুরু হবে আগস্ট মাসে। মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, রমজানের কথা মাথায় রেখে সরকার ভোজ্যতেলের ওপর থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা করছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে একটি চিঠি লিখেছে। এনবিআরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে ওই চিঠিতে।
ভোজ্যতেলের ওপর থেকে বিদ্যমান ১০ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করা হলে সরকার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এই পদক্ষেপের সুফল ভোক্তা জনগণ পাবে। এই পদক্ষেপের যুক্তি ও সার্থকতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে ভোক্তাসাধারণ এর সুফল পাবে কি পাবে না, তার ওপর। তাই কোনো স্বার্থান্বেষী চক্র যেন এর সুযোগ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে? চিনি ও ভোজ্যতেল সরবরাহের ক্ষেত্রে যে ডিও পদ্ধতি চালু রয়েছে, তার পরিবর্তে পরিবেশক পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তা শুরু করার নির্দেশ দিলেও ব্যবসায়ী কেউ-ই এ পর্যন্ত পরিবেশক পদ্ধতি শুরু করেননি। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা-বৈঠক হয়েছে, তারপর সিদ্ধান্ত হয়েছে ডিও পদ্ধতি চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু ১ জুলাই থেকেই যে পরিবেশক পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে চালু হয়ে যাবে, তার প্রস্তুতি নেই। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশক নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁরা ৩০ জুনের মধ্যে পরিবেশক নিয়োগের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন।
চিনি ও ভোজ্যতেল সরবরাহে যে পরিবেশক পদ্ধতি চালু হচ্ছে, তার যাবতীয় কার্যক্রম নিয়মিত ও নিবিড় তদারক করা প্রয়োজন। বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি, ডিসিদের নেতৃত্বে জেলা কমিটি ও ইউএনওদের নেতৃত্বে উপজেলা তদারক কমিটি থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব কমিটি গঠন করা হয়নি। তাহলে কী প্রস্তুতি নিয়ে নতুন একটি পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে, সেটিই তো ভেবে দেখা দরকার। বাণিজ্যসচিব আশা প্রকাশ করেছেন, পরিবেশক পদ্ধতির সুফল জনগণ শিগগিরই পাবে। আমরা তাঁর এই আশাবাদের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চাই। সেই সঙ্গে প্রতিবছর রমজান সামনে রেখে টিসিবিকে সক্রিয় করার লোক দেখানো মহড়া না দিয়ে সত্যিকার অর্থে এটিকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.