ইউপি চেয়ারম্যানের রোষানল-শক্তির দাপটে অসহায় গ্রামবাসী

গ্রামে নতুন রাস্তা নির্মিত হবে, এটা খুশির খবর। কিন্তু কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খোর্দবাখাইল গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার সেটা মনে করেনি। তাদের অভিযোগ, ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বখতিয়ার হোসেন কেবল তার পরিবারের সদস্য ও গুটিকয়েক আত্মীয়ের স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে এ রাস্তা নির্মাণ করতে চাইছেন।

এ জন্য যে ব্যয় পড়বে সেটা নিজের তহবিল থেকে মেটাবেন না, বরং হাত বাড়িয়েছেন তিনি গরিবের হক কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির প্রতি। এ কারণে যাদের জমি হারাতে হবে, তাদের ক্ষোভ স্বাভাবিক। সঙ্গতভাবেই তারা প্রতিবাদী হয়েছেন। সবচেয়ে কাছের জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছিল এ ক্ষোভ প্রশমিত করায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলে প্রশাসনের সহায়তা চাইতে পারতেন। উপজেলা পরিষদ সালিশ করতে পারত। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যেত। কিন্তু তিনি চলেছেন ভিন্ন পথে। শক্তির দাপটে তিনি পরাভূত করতে তৎপর হয়েছেন। এ জন্য কাজে লাগানো হয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনীকে, যারা অত্যাচার চালিয়ে অনেক পরিবারকে শুধু গৃহহারা নয়, গ্রামছাড়া করেছে। মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত 'পুলিশের সামনেই কুষ্টিয়ার গ্রামে হামলা, লুটপাট' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনদিন ধরে তাণ্ডব চলছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি মনির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, 'কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি।' তার এ বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায় যে, দায়িত্ব পালনে থানার গাফিলতি ছিল। সমকালে প্রকাশিত আলোকচিত্র থেকে দেখা যায়, মালামাল নিয়ে নারী-পুরুষের দল চলেছে মেঠোপথ দিয়ে। কেন এমন অবস্থা সৃষ্টি হলো এবং এ জন্য কে বা কারা দায়ী সেটা বের করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল। কিন্তু স্পষ্টতই তারা ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে ব্যর্থতা রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের। 'ডিজিটাল বাংলাদেশের' যুগে কোথাও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে থানা ও উপজেলা প্রশাসনে তার খবর দ্রুত পেঁৗছাতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট থানার ওসির মন্তব্য শুনে মনে হয়, সেখানে '১৮ মাসে বছর' হয়। এর পেছনে আরও রহস্য থাকতে পারে। এমন অবস্থায় অসহায় গ্রামবাসীর জীবন ও সহায়-সম্পদ অনিরাপদ হওয়াই স্বাভাবিক। তাদের পাশে কেউ কি দাঁড়ানোর নেই?

No comments

Powered by Blogger.