দুর্নীতির মামলা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক নয়-অবৈধ অর্থ লেনদেন মামলার রায়

সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের দায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো এবং তাঁর সহযোগী ইসমাইল হোসেন সায়মনকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমাদের দেশে অন্য সব বিষয়ে যেমন রাজনীতির রং চড়ানো হয়, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই বিএনপির নেতারা একে সাজানো বলে দাবি করেছেন। রায় নিয়ে সমালোচনা অন্যায় নয়; কিন্তু সেই সমালোচনা এমন হওয়া উচিত নয়, যাতে বিচারব্যবস্থার ওপরই অনাস্থা প্রকাশ পায়। তা ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অন্তত আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করাই সমীচীন ছিল।
আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থের লেনদেনের মামলা হয় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই এ রায় দেওয়া হয়েছে। বিএনপি এর বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। কার বিরুদ্ধে তাদের এই কর্মসূচি? সরকার? কিন্তু সরকার তো এই মামলার বাদী নয়। বাদী হলো দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের পক্ষের আইনজীবী আনিসুল হক বলেছেন, এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
এখানে দেখার বিষয়, আসামির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে কি না। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট সিমেন্সের দেওয়া ঘুষের অর্থ জব্দ করেছিলেন, যার বড় অংশ জমা পড়েছিল সিঙ্গাপুরে আরাফাত রহমান কোকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এই অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সিঙ্গাপুরে আরাফাত রহমান কোকোর সহযোগীকে জরিমানাও গুনতে হয়েছে। বিদেশে কোকোর ঘুষ লেনদেনের খবরটি নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ২০০৮ সালের ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় প্রথম প্রকাশিত হয়।
আদালতের রায় নিয়ে অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক বাঞ্ছনীয় নয়। মন্ত্রীরাও এ নিয়ে কথা যত কম বলবেন, ততই মঙ্গল। কোন মামলার বিচার কবে হবে, সেটি ঠিক করার দায়িত্ব আদালতের।
বিএনপির দাবি অনুযায়ী এটি যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হয়, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কেন দেশে ফিরে আইনি লড়াই করলেন না? এখনো সময় আছে। নিম্ন আদালতে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে মাত্র। এরপর আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন, দলমত-নির্বিশেষে সব দুর্নীতির মামলাই সমগতিতে চলা উচিত। কে কোন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তার ওপর বিচারের গতিবিধি ঠিক হতে পারে না। আইন সবার জন্য সমান হতে হবে। সেটাই ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত। আরাফাত রহমান কোকোর অবৈধ অর্থের লেনদেনের ঘটনাটি বিএনপির আমলের। দুর্নীতির মামলার এ রায় থেকে বর্তমান ক্ষমতাধরদেরও সাবধান হওয়া উচিত। সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সব দুর্নীতিরই বিচার হওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.