সাংসদদের জন্য আলাদা ‘নিয়ম’ কেন?-ফোনবিল খেলাপি

সাংসদেরা সংসদে বসে যে আইন তৈরি করেন, তা মেনে চলতে বাধ্য জনগণ। কারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত এই প্রতিনিধিরা আইন প্রণয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। কিন্তু যাঁরা আইন তৈরি করেন তাঁরাই যদি আইন না মানেন, বা তাঁদের নিজেদেরই যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকে তবে? বিষয়টি নৈতিকতার প্রশ্ন।

আমাদের সাংসদদের অনেকেই এই নৈতিকতার ধার ধারেন না।
নাগরিকদের যারা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিফোন সেবা নেন, তাঁদের মাসে মাসে বিল দিতে হয়। কোনো গ্রাহক পরপর দুই মাস বিল দিতে ব্যর্থ হলে তাগাদাপত্র যায়, সঙ্গে সংযোগচ্যুতির নোটিশ, তৃতীয় মাসে বিল না দিলে কেটে দেওয়া হবে সংযোগ। সাংসদদের বেলায় এ ধরনের কোনো ‘নিয়ম’ নেই। একটি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর, এ সময়ের মধ্যে তিনি একবারও বিল না দিলে কোনো নোটিশ যাবে না, সংযোগও কাটা হবে না, এমনকি তাঁকে বিলখেলাপিও বলা যাবে না। হিসাব-নিকাশ সব সাংসদ হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। এরপর সেই সাবেক সাংসদকে বিলখেলাপি বা যে নামেই ডাকা হোক, তাতে কী আসে-যায়! তখন বিল পরিশোধের নোটিশ দিয়েও লাভ নেই। এই অদ্ভুত ‘নিয়মের’ কারণে প্রথম থেকে বিগত অষ্টম সংসদ পর্যন্ত ১১৯ জন বিলখেলাপি সাংসদের কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে আড়াই কোটি টাকার ওপর। এই টাকা আদায় করা যাবে, এমন ভরসাও কম।
সবার জন্য যে নিয়ম, সাংসদের জন্য তা নয়, কেন? তাঁরা কি তবে জনগণের ঊর্ধ্বে? আইন করে সাংসদদের শুল্ক ছাড়া গাড়ি আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের সম-অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক হলেও অন্তত সংসদে আইন করে এই বৈষম্য সাংসদেরা তৈরি করে নিয়েছেন। কিন্তু টেলিফোন বিলের ক্ষেত্রে তো তেমন আইনও হয়নি যে সাংসদেরা বিল না দিলে তাঁদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, নোটিশ দেওয়া যাবে না। বিষয়টি শুধুই ‘নিয়ম’। আইন তৈরির ক্ষমতা যাঁদের হাতে, তাঁদের জন্য নিয়ম ভিন্ন হবে—এটাই যেন স্বাভাবিক।
টেলিফোন ব্যবহার করব কিন্তু বিল দেব না—এই মানসিকতা যে সাংসদের, তাঁর কি আইনপ্রণেতা হওয়ার নৈতিক অধিকার রয়েছে? কোনো বিলখেলাপি সাংসদ কি এই প্রশ্নটি নিজেকে করে দেখেছেন কখনো? আত্মজিজ্ঞাসার এই বোধটি নষ্ট হয়েছে বলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে না। টেলিফোনের বিল হিসেবে এখন একজন সাংসদ বর্তমানে ছয় হাজার টাকা ভাতা নিয়ে থাকেন, অথচ বিল দেন না। সংসদে না এসেও অনেকে সাংসদ হিসেবে বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই গ্রহণ করেন।
অনেক সাংসদ যেহেতু নীতি-নৈতিকতার ধার ধরেন না, তাই বিল না দিলেও তাঁদের টেলিফোন সংযোগ না কাটার বা নোটিশ না দেওয়ার যে ‘নিয়ম’ বর্তমানে কার্যকর রয়েছে, তা বাতিল করা ছাড়া পথ নেই। আর এ ধরনের বিলখেলাপি সাংসদ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে বিধানও শক্তভাবে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে হয়তো কিছু কাজ হতেও পারে।

No comments

Powered by Blogger.