প্রকৌশল বিষয়ে ভর্তি-বুয়েট ও অন্যান্য,

প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফল। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা শুরু করে দিয়েছেন জীবন গড়ার প্রস্তুতি। কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, কেউ বা শিক্ষক হিসেবে জীবনটা সাজানোর জন্য অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন ভর্তিযুদ্ধে। বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকেরই প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়া।


কিন্তু বুয়েটে ভর্তিপরীক্ষায় কেবল নির্বাচিত শিক্ষার্থীরাই অংশ নিতে পারেন। তাই প্রস্তুতিটা হওয়া চাই যথার্থ। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ভর্তিসংক্রান্ত তথ্যগুলো।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
বুয়েটের পাঠ্য বিষয়গুলো হচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (পুরকৌশল)—আসন ১৯৫টি। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল)—আসন ১৯৫টি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল)—আসন ১৮০টি। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং—আসন ১২০টি। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (কেমিকৌশল বিভাগ)—আসন ৬০টি। ম্যাটারিয়ালস অ্যান্ড ম্যাটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (বস্তু ও ধাতব কৌশল) আসন ৪০টি। ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং (পানিসম্পদ কৌশল)—আসন ৩০টি। নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং (নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল)—আসন ৩০টি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং—আসন ৩০টি।
এ ছাড়া স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে রয়েছে দুটি বিষয়। আর্কিটেকচার (স্থাপত্য) বিষয়ে আসন ৫৫টি এবং আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা) বিষয়ের আসন ৩০টি।

ভর্তির যোগ্যতা
বুয়েটের ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে হলে শিক্ষার্থীকে এইচএসসি অথবা সমমানের পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও ইংরেজিতে সর্বমোট স্কোর ১৯ হতে হবে (২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের তথ্য অনুযায়ী)। ভর্তিপরীক্ষায় ‘ক’ ও ‘খ’—এ দুটি বিভাগ থাকে। ‘ক’ বিভাগ থেকে শুধু ‘প্রকৌশলে’ এবং ‘খ’ বিভাগ থেকে একই সঙ্গে ‘প্রকৌশল’ ও ‘স্থাপত্যে’ ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। ৬০০ নম্বরের তত্ত্বীয় ও ৪০০ নম্বরের মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষা দুটি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভিজিট করুন www.buet.ac.bd

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকৌশল বিষয়ে দেশের প্রাচীন তিনটি প্রতিষ্ঠান কুয়েট-চুয়েট-রুয়েট এককালে বিআইটি নামে পরিচিত ছিল। ২০০২ সালে রুয়েট এবং ২০০৩ সালে কুয়েট ও চুয়েট পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বুয়েট ছাড়াও প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এগুলো পরিচিত।

কুয়েট: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আটটি বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হলো কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (আসন ৬০), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (১২০), ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (৬০), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (১২০), ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (৬০), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (১২০), লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং (৬০), আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং (৬০)।
ভর্তির যোগ্যতা: কুয়েট থেকে ভর্তি ফরম তোলার জন্য পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি—এই চারটি বিষয়ে মোট জিপিএ ১৭.৫ চাওয়া হয়েছিল। ইংরেজি ব্যতীত বাকি তিনটি বিষয়ে কমপক্ষে জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভিজিট করুন www.kuet.ac.bd ওয়েবসাইটটি।

রুয়েট: রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা ছয়টি বিষয়ে পড়তে পারেন—কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
ভর্তির যোগ্যতা: রুয়েট থেকে ভর্তি ফরম তোলার জন্য পদার্থ, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি—এই চারটি বিষয়ে মোট জিপিএ ১৭-এর প্রয়োজন। এখানে ৭০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে—৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ এমসিকিউ ধরনের। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ভিজিট করুন রুয়েটের ওয়েবসাইট www.ruet.ac.bd।

চুয়েট: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুুয়েট) সাতটি বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (আসন ১২০), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (১৩০), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (১৩০), সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (১৩০), আর্কিটেকচার (৩০), আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (৩০), পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং (৩০)।
ভর্তির যোগ্যতা: চুয়েটে আবেদন করার জন্য এইচএসসিতে পদার্থ, গণিত ও ইংরেজিতে পৃথকভাবে ন্যূনতম জিপিএ-৩ পেতে হবে। তবে পদার্থ, গণিত ও রসায়নে মোট জিপিএ হতে হবে ১৩.০০। এখানে ভর্তিপরীক্ষা হয় ‘ক’ও ‘খ’ বিভাগে। ‘খ’ বিভাগ থেকে যাঁরা ভর্তি ফরম তুলবেন, তাঁদের মুক্তহস্ত অঙ্কন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বিস্তারিত www.cuet.ac.bd ওয়েবসাইটে।

অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
এ ছাড়া প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয় এবং স্থাপত্য বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেওয়া হলো, যা ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাজে লাগতে পারে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: www.ku.ac.bd
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), সিলেট: www.sust.edu.bd
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি): www.pstu.ac.bd
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি): www.nstu.edu.bd
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মবিপ্রবি), টাঙ্গাইল: www.mbstu.ac.bd
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি), দিনাজপুর: www.hstu.ac.bd
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি): www.pust.ac.bd
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি): www.jstu.edu.bd

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে প্রকৌশল ও স্থাপত্য বিষয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর কয়েকটি হচ্ছে: আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (www.aust.edu), নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি (www.northsouth.edu), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (www.aiub.edu), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি (www.bracu.ac.bd), এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিসহ (www.uap-bd.edu) বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে আপনি পড়তে পারেন স্থাপত্য এবং প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ে।

তথ্যসূত্র: সব তথ্য উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া। তবে পরীক্ষার্থীদের সর্বশেষ ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করতে পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.