আদালতে বিশৃঙ্খলা-দুর্ভাগ্যজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত

সংবিধানকে কটাক্ষ করে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে রিট আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের রায় প্রদানকালে বিচারকক্ষে ও আদালত অঙ্গনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ সময়ে কয়েকজন আইনজীবী মাননীয় বিচারকদের প্রতি অপমানসূচক মন্তব্য করেন এবং একজন


বিচারককে লক্ষ্য করে একটি প্লাস্টিক দ্রব্য ছুড়ে মারা হয়। কেউ কেউ আদালত কক্ষে স্লোগান তোলেন, চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করেন। আদালত রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ প্রদানকালে বলেন, 'সংবিধানকে কটাক্ষ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং ফজলুল হক আমিনীর বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।' এ ধরনের অভিমত ব্যক্ত করার সময় বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন আইনজীবী প্রবল আপত্তি জানাতে থাকেন এবং কেউ কেউ অশোভন ভাষাও ব্যবহার করেন। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত একদল আইনজীবী প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। এ সময়ে দু'পক্ষ রাজনৈতিক মঞ্চের মতোই পবিত্র আদালতকে ব্যবহার করেন, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাদের বাকবিতণ্ডা ও হতাহাতিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা সংবাদপত্র এবং বেতার ও টিভির খবরে প্রকাশ হয়েছে। পরিস্থিতি এত দূর গড়িয়েছিল যে এজলাসের অভ্যন্তরেই পুলিশকে অবস্থান গ্রহণ করতে হয়। আদালত মানুষের শেষ ভরসাস্থল। এখানের সব কার্যক্রম ও আদেশ-নির্দেশ বিষয়ে সবাই সবসময় একমত হবেন, সেটা হওয়া সম্ভব নয় এবং তার প্রতিবিধানের ব্যবস্থাও আদালতেই হতে পারে। আদালত কোনো অভিমত দিলে সেটা যেমন মেনে নিতে হয়, তেমনি এ সম্পর্কে আপত্তি এমনকি চ্যালেঞ্জ জানানোর ব্যবস্থাও বিচার ব্যবস্থারই অঙ্গ। মঙ্গলবার হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন সে বিষয়েও আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, 'হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ পছন্দ না হলে আপিল করতে পারেন এবং এ নিয়ে হট্টগোলের কিছু নেই।' বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে আদালতের ভেতরে ও বাইরে পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এসব আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত নন, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা পেশাগত অবস্থান ও দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে নিজেদের তুলে ধরতে চেয়েছেন যতটা না আইনজীবী তার চেয়ে ঢের বেশি পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ কেউই এমন আচরণ সমর্থন করতে পারে না। এতে আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। কেন তারা এমনটি করবেন? আমরা তাদের কাছে শুভবুদ্ধির প্রত্যাশা করব। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি পরিহারে তাদের অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। তারা এটাও নিশ্চয়ই ভালোভাবে অবগত যে আদালতে অসদাচারণ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিণতি কখনো ভালো হয় না। অতীতে এ ধরনের রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টির ঘটনায় সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গন কলুষিত হয়েছে। মঙ্গলবার কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী অসংযত আচরণকারীদের নিবৃত্ত করার জন্য এজলাসের ভেতরে ও বাইরে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট ছিলেন। তাদের কারও কারও নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, কিন্তু কালো গাউনের মর্যাদা রক্ষায় ছিলেন যত্নবান। রাজনৈতিক পাল্টপাল্টিতে লিপ্ত ব্যক্তিবর্গ নিশ্চয়ই তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.