অন্যকে অসম্মানিত করার মধ্যে গৌরব নেই-স্পিকারের সতর্কীকরণ

জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ সাংসদদের প্রতি যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, তাঁরা তা আমলে নিলে জাতীয় সংসদের মর্যাদাই শুধু বাড়ত না, প্রতিষ্ঠানটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হতো। গত রোববার সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেল প্রাঙ্গণে একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে কাউকে আহত না করে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তিনি সাংসদদের


প্রতি আহ্বান জানান। সম্প্রতি সরকারদলীয় একজন নারী সাংসদের সংসদে বিরোধী দলের নেতাকে উদ্দেশ করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে স্পিকার আরও বলেছেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দিলে বিরোধী দল বলার সুযোগ পাবে যে যেখানে এ ধরনের কথাবার্তা হয়, সেখানে আমরা যাব না।’
স্পিকার এর আগেও অশালীন ও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের জন্য কয়েকজন সাংসদকে সতর্ক করে দিয়েছেন, কারও কারও মাইক বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সাংসদদের চৈতন্যোদয় হয়নি। উল্লিখিত নারী সাংসদ বিরোধী দলের নেতার যে বক্তব্য নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, তা সংসদের ভেতরে বলা হয়নি। সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশে কারও বক্তব্য নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত নয়। কারণ, সেখানে অনুপস্থিত থাকার কারণে বক্তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই। এর অর্থ এই নয় যে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা মাঠে-ময়দানে যা খুশি তা বলে বেড়াবেন।
আক্রমণাত্মক কথা বলে নিজ দলের বাহবা পেলেও দেশবাসী যে সেই বক্তব্য ভালোভাবে নেয় না, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন স্পিকার। সরকারি দলের সাংসদদের অধিকতর দায়িত্বশীল হতে হয়। এ কথা মনে রাখা উচিত যে বিরোধী দলকে গালাগাল করার জন্য তাঁদের সংসদে পাঠানো হয়নি। সরকারি দলের কোনো কোনো সাংসদের দায়িত্বহীন বক্তব্যের কারণেই বিরোধী দল বলার সুযোগ পাচ্ছে, ‘যেখানে দেশ ও জনগণের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় না, সেখানে গিয়ে কী লাভ?’ রাজনীতিতে গালাগালের অপসংস্কৃতি এত দিন মাঠে-ময়দানে থাকলেও এখন তা খোদ সংসদে ঢুকে পড়েছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য আশনিসংকেতও বটে।
সাংসদেরা যদি অন্যকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে না পারেন, তাহলে অন্যের কাছ থেকে সম্মান আশা করেন কীভাবে? অন্যকে অসম্মানিত করার মধ্যে গৌরব নেই।

No comments

Powered by Blogger.