মেধাবী মুখ-সেরাদের সেরা by ইমাম হাসান

সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে টপকে শেখ ফরিদ এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন। কিন্তু ফরিদের জীবনটা নানা উত্থান-পতনে ভরা।


এসএসসিতে প্রথম বিভাগ পেলেও মন খারাপ ছিল শেখ ফরিদের। কারণ, লক্ষ্মীপুরের ভাটারা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় স্কুলে যে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি, প্রত্যাশা তাই ছিল প্রথম বিভাগের আরও একটু ওপরে। জীবনের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় তাই ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় কলেজে ভর্তি হলেও মন ছিল না পড়ার টেবিলে। তাই খেলাধুলা ও আড্ডা দিয়েই সময় পার করতে থাকেন ফরিদ। ক্রিকেট সবচেয়ে পছন্দের খেলা হলেও ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাতেও পারদর্শী লক্ষ্মীপুরের এই ছেলেটি। তবে পড়াশোনার কথা শুনলেই কেবল সব আলসেমি আর জড়তা পেয়ে বসে তাঁকে। আর তাই রামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়ে সবাইকে হতাশা করেন ফরিদ। পাস করলেও ফলাফল আশানুরূপ ছিল না। ‘পরিবারসহ পরিচিতজনেরা বলত, ছেলেটি বখে গেছে। নিজের কাছেও খারাপ লাগত। আসলে ফলবিপর্যয়ের পেছনে আমার হতাশাই ছিল প্রধান কারণ।’ বলছিলেন ফরিদ।
তবে মা নূরজাহান বেগম হাল ছাড়েননি। ছেলেকে সব সময় বোঝাতেন তিনি। ‘মা ও বন্ধুদের অনুরোধ রাখতেই ঢাকা কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া। সুযোগ পেয়ে ভর্তি হই ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে।’ বলে থামেন ফরিদ। তারপর বলেন, ‘ভূগোল বিভাগে ভর্তি হয়ে মনে মনে বেশি খুশি ছিলাম। কারণ, আমার ব্যবহারিক ক্লাস ভালো লাগত না। তবে মজার ব্যাপার, ক্লাস শুরু হলে দেখি ভূগোলে ব্যবহারিকের ছড়াছড়ি। তবে নতুন পরিবেশে এসে সবার সঙ্গে মিশতে বেশ ভালো লাগত। হতাশা কাটিয়ে একটু একটু করে পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু তখনো ভাবিনি, আমিই হব সারা দেশের সেরাদের সেরা, যা অনেকটা অসম্ভব।’
কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সামসুজ্জামান বলেন, ‘এটা অনেক মজার এবং খুশির খবর যে আমাদের ফরিদ প্রথম হয়েছে। তার ভালো ফলের পেছনে ছিল একান্ত প্রচেষ্টা এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা। ক্লাসে তাকে সব সময় নিয়মিত এবং আগ্রহী দেখেছি।’
ভালো ফল কীভাবে সম্ভব? ‘শিক্ষকদের লেকচার অনুসরণ করা আর নিজে নোট করার অভ্যাস গড়ে তোলা। ভালো রেজাল্ট করতে সারা দিন পড়ার দরকার হয় না। নিয়মিত এক-দুই ঘণ্টা বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেই যথেষ্ট। তবে অবশ্যই বুঝে পড়া দরকার।’ বলেন ফরিদ।
ক্লাসে মনোযোগী থাকায় শিক্ষকেরাও সব ধরনের সাহায্য করতেন। সবাই উৎসাহ দিতেন। কোন প্রশ্নের উত্তর কীভাবে করতে হবে, বুঝিয়ে দিতেন।’ শিক্ষকদের ভালোবাসায় তাই ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষে করে ফরিদ স্বপ্ন দেখেন নিজেও শিক্ষক হয়ে অর্জিত জ্ঞান বিলিয়ে দেওয়ার।

No comments

Powered by Blogger.