পবিত্র কোরআনের আলো-এহরাম অবস্থায় শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কাফ্ফারার বিধান দেওয়া হয়েছে

৯৩. লাইছা আ'লাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া আ'মিলুস্ সা-লিহা-তি জুনাহুন ফীমা ত্বায়ি'মূ ইযা মাত্তাক্বাও ওয়া আ-মানূ ওয়া আ'মিলুস্ সা-লিহা-তি ছুম্মাত্তাক্বাও ওয়া আ-মানূ ছুম্মাত্তাক্বাও ওয়া আহছানূ; ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুল মুহ্ছিনীন।৯৪. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ লাইয়াবলুওয়ান্নাকুমুল্লাহু বিশাইয়িম্ মিনাস্ সাইদি তানা-লুহূ আইদিকুম ওয়া রিমা-হুকুম্ লিইয়া'লামাল্লা-হু মান ইয়াখা-ফুহূ বিলগাইবি; ফামানি'তাদা বা'দা যা-লিকা ফালাহূ আ'যা-বুন আলীম।


৯৫. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ লা তাক্বতুলূস্ সাইদা ওয়া আনতুম হুরুমুন; ওয়া মান ক্বাতালাহূ মিনকুম্ মুতাআ'ম্মিদান ফাজাযা-উম্ মিছলু মা ক্বাতালা মিনান্নাআ'মি ইয়াহ্কুমু বিহি যাওয়া আ'দলিম্ মিনকুম হাদইয়াম্ বা-লিগাল কা'বাতি আও কাফ্ফা-রাতুন ত্বাআ'-মু মাছা-কীনা আও আ'দলু যা-লিকা সিইয়া-মাল্ লিইয়াযূক্বা ওয়া বা-লা আমরিহি আ'ফাল্লাহু আ'ম্মা ছালাফ্; ওয়া মান আ'-দা ফাইয়ানতাকি্বমুল্লা-হু মিনহু ওয়াল্লাহু আ'যীযুন যুন তিক্বা-ম। [সুরা : আল মায়েদা, আয়াত : ৯৩-৯৫]
অনুবাদ : ৯৩. যারা ইমান এনেছে এবং নেক কাজ করছে, তারা এ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে যা কিছু খেয়েছে এর জন্য তাদের কোনো গুনাহ নেই। হ্যাঁ, যদি তারা দায়িত্বনিষ্ঠ থাকে, ইমান রাখে ও নেক কাজ করে। এভাবে এর পরেও তারা দায়িত্বনিষ্ঠ থাকবে, ইমান রাখবে, এরপরও দায়িত্বনিষ্ঠ থাকবে এবং সততার নীতি অবলম্বন করবে। আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীল মানুষদের ভালোবাসেন।
৯৪. হে ইমানদাররা, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই এহরাম বাঁধা অবস্থায় এমন কিছু শিকারের বস্তু দিয়ে পরীক্ষা নেবেন সেগুলো তোমরা সহজেই হাতে বা বর্শায় ধরতে পারো। (পরীক্ষা এ জন্য) যেন আল্লাহ এ কথা জেনে নিতে পারেন যে তাঁকে বিমূর্ত হওয়া সত্ত্বেও কারা ভয় করে। এরপরেও যদি কেউ সীমালঙ্ঘন করে তবে তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৯৫. হে ইমানদাররা! এহরাম বাঁধা অবস্থায় কখনো শিকার হত্যা করো না। যদি কেউ জেনে বুঝে তা করে তবে এর প্রতিবিধান হচ্ছে, সে যে জন্তু হত্যা করেছে তার সমান একটি গৃহপালিত জন্তু কোরবানি হিসেবে কাবায় পেঁৗছে দেবে। আর ওই বিষয়টা ফয়সালা করবে তোমাদের মধ্যকার দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। কিংবা এর জন্য কাফ্ফারা হবে কয়েকজন গরিব মিসকিনকে খাওয়ানো অথবা সমপরিমাণ রোজা রাখা। যাতে করে সে নিজের ত্রুটি উপলব্ধি করতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা জারির আগে যা কিছু গত হয়ে গেছে আল্লাহ তা মাফ করে দিয়েছেন। কিন্তু যদি কেউ এই ত্রুটির পুনরাবৃত্তি করে তবে আল্লাহ তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবেন। আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী এবং প্রতিশোধ গ্রহণেও সক্ষম।
ব্যাখ্যা : ৯৩ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : আগের আয়াতগুলোর মাধ্যমে মদ ও জুয়া হারাম ঘোষণা করার পর কোনো কোনো সাহবি রাসুল (সা.)-এর কাছে হাজির হয়ে জানতে চাইছিলেন, তাদের আবেদ লোকই তো মদ্যপান করতেন এবং জুয়া লব্ধ মালও খেয়েছেন। এ অবস্থায় অনেকে মারাও গেছেন। আর যারা জীবিত আছেন তাদের শরীরেও তো এসব হারামের নির্যাস রয়ে গেছে। এ সম্পর্কেই এ আয়াতটি নাজিল হয়। আয়াতটির মূল কথাটা হলো হারাম হওয়ার আগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের কোনো পাপ নেই। আর হারাম হওয়ার আগে খেয়েছিলেন এমন যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদেরও এ বিষয়ে অতীতের ব্যাপারে দায়ী করা হবে না।
৯৪ ও ৯৫ নম্বর আয়াত দুটির শানেনুজুল এ রকম : হুদায়বিয়ার সন্ধির পরের বছর রাসুল (সা.) যখন হিজরতের পর প্রথম বারের মতো সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় যান তখন এহরাম বাঁধা অবস্থায় তারা অনেক বন্য জন্তু দেখতে পান। এগুলো শিকার করা খুব সহজ ছিল। এরা দলে দলে এসে তাঁদের পাশ ঘেঁষে চলত। এগুলোকে হাতে ধরে ফেলা বা বর্শা দিয়ে শিকার করার লোভনীয় পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল। এ সম্পর্কেই এ আয়াতটি নাজিল হয়। এহরাম অবস্থায় যুদ্ধ, খুন, জখম বা পশু পাখি শিকার আগেও নিষিদ্ধ ছিল। এ আয়াতের মাধ্যমে তা আবারও নিষিদ্ধ করা হয় এবং শিকারের পশু দিয়ে ইমানদারদের ইমান পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। ৯৫ নম্বর আয়াতে এর কাফফারার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.