বেদনাসিক্ত ১৫ আগস্ট-শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে

আজ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস, বাঙালির শোক ও সন্তাপের দিন। এখন থেকে ৩৬ বছর আগে ১৯৭৫ সালের সেই ১৫ আগস্ট ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের মদদে এ দেশেরই কিছু দুর্বৃত্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে।


পরিকল্পনাটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সবংশ নিশ্চিহ্ন করা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে লোপাট করে দেওয়া। সেদিন রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেল কিংবা পুত্রবধূরাও। ঘাতকচক্র তাঁকে বা তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে হত্যাকারীদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করেছিল, পুরস্কৃত করেছিল। খুনিদের রক্ষা করার জন্য দেশের সংবিধানেও হাত দেওয়া হয়েছিল। এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়াকে রহিত করেছে ইনডেমনিটি আইন পাস করার মাধ্যমে। এমনকি এক খুনিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জাতির ঘাড়ে বহুকাল ধরে চেপে বসেছিল শোকের পাশাপাশি বিচারের দায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইনের মতো কলঙ্কিত আইনটিকে বাতিল করে এবং শুরু হয় প্রচলিত আইনে বিচার। কিন্তু সে বিচার তখন তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি। ঘটনাবহুল অনেক বছর পার করে বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় জনগণের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে। দেশের মানুষ এ জঘন্য খুনের বিচারের দাবিকে ভোটের মাধ্যমে সমর্থন জানায় পুনর্বার। ফলে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করার মাধ্যমে। খুনিদের পাঁচজনের দণ্ডাদেশ কার্যকর হলেও আসামিদের কেউ কেউ রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে আসছে তাদেরই অদৃশ্য দোসররা। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের একাংশের ফাঁসি রায় কার্যকরই যথেষ্ট নয়। মনে রাখতে হবে, এখনো প্রতিক্রিয়াশীল সেই অপশক্তি দেশ থেকে উৎখাত হয়ে যায়নি।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা শুধু ব্যক্তিকে হত্যাপ্রয়াস ছিল না, ছিল জাতির স্বাধীনতার শক্তিকে হত্যার অপচেষ্টা। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তারা একটি আদর্শকে খুন করতে চেয়েছিল। কিন্তু এ দেশে তা কখনো সম্ভব হবে না। স্বাধীনতার আদর্শকে নিরঙ্কুশ করতে এখন আমাদের প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। আর সে আদর্শ হলো গণমানুষের ভাত-কাপড় নিশ্চিত করা, কৃষকের হাতকে শক্তিশালী করে তোলা, আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠা করা, সমাজের ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করা। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা জাতির জনকের খুনের দায় কিছুটা হলেও শোধ করতে পারব। আজকে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তর করার কাজে অধিকতর মনোনিবেশ করতে হবে আমাদের। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা তারই সূত্রে গ্রোথিত। এই পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনের ভিন্ন রকম প্রতিশোধ গ্রহণ করা দরকার। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর অর্জন স্বাধীনতাকে যারা মেনে নিতে পারেনি, তাদের ব্যাপারেও সদা সজাগ থাকতে হবে। যাতে করে আর কোনো শোক বাংলার মানুষের ওপর শত্রুরা চাপিয়ে দিতে না পারে। শোকাবহ এই দিনে আমরা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিহত পরিবারবর্গকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যরা সব রাজনীতির ঊধর্ে্ব। তাঁদের স্বীকৃতির ব্যাপারে সব সংকীর্ণতা মুছে ফেলতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.