মহাসড়কের সংস্কার-আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই

ঈদের কারণে যে মুহূর্তে দেশের সড়কপথগুলো হয়ে উঠবে বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই খানাখন্দে ভর্তি হয়ে গেছে ২১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ। এমনই খারাপ অবস্থা হয়েছে যে রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে এবং এর পরিণতিতে সড়কের বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
দু-তিন দিন ধরে ময়মনসিংহের যোগাযোগব্যবস্থা বিপন্ন ছিল একই কারণে। এই রমজানের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধাকে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ভাঙা রাস্তা হেঁটে পেরিয়ে যেতে হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুরবস্থা তো অবর্ণনীয়। এমনিতেই এই সড়কে মাইলের পর মাইল লম্বা যানজট লেগেই থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি। অথচ যে বৃষ্টি হয়েছে, তা ছিল খুবই স্বাভাবিক। বন্যা যেটুকু হয়েছে, সেটাও দেশের জন্য স্বাভাবিক না বলে উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে সড়কগুলোর দুরবস্থার মূল কারণ সংস্কার না করা।
মহাসড়কের প্রায় সবই সংস্কারবিহীন পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। ছাল-বাকল ওঠা রাস্তাগুলো যে মুহূর্তে বৃষ্টির পানির ছোঁয়া পেল, তখনই কোথাও কোথাও গর্ত হয়ে গেল, যেন পুকুরের মতো দেখতে। এই পুকুরের মতো তৈরি হওয়া গর্তের ছবি পত্রিকান্তরে দেখে আসন্ন ঈদে বাড়ি যাওয়ার যাত্রীদের নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, কিভাবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এবারের ঈদে বাড়ি যাবেন। একদিকে টিকিট না পাওয়া, অন্যদিকে রাস্তার এ অবস্থা তাঁদের ভয়ানক দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
এর দায় অর্থ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। কারণ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অর্থ ছাড় করা হয়নি এখনো। আগের বছরও সড়কের সংস্কারের জন্য যে টাকা চাওয়া হয়েছিল, তা-ও পায়নি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড় বলে যে প্রবাদবাক্য প্রচলিত আছে, এখন তা দেশের সড়কগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে অধিক পরিমাণ টাকা চাওয়া হয়েছে সংগত কারণেই। প্রশ্ন হচ্ছে, আগে যেখানে কম টাকা ছাড় করতে পারেনি মন্ত্রণালয়, সেখানে এখন অধিক টাকা ছাড় করাবে কিভাবে।
রাস্তা সংস্কার একটি রুটিন ওয়ার্ক। এটি প্রতিবছরই করতে হয়। সংস্কার না করা হলে চলাচলে অসুবিধা হবেই। এই পরিস্থিতিতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করে অতি জরুরি বিবেচনায় নিয়ে সড়কপথগুলোর সংস্কারের কাজ এখনই শুরু করা উচিত। তা না হলে লাখ লাখ মানুষ যখন দশ-এগারো দিন পই রাজধানী থেকে গ্রামে যেতে শুরু করবে, তখন ভোগান্তির শেষ থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.