আহা, কী আনন্দ! by আসিফ আহমদ

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখনকার ছাত্রনেতাদের দেখলে মানুষ ভয় পায়। তিনি এখন মন্ত্রী। এক সময় ছাত্রনেতা ছিলেন। বিএনপি নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা (এক সময় তার নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ছিল এভাবে_ ব্যা.না. হুদা) সংবিধান সংশোধন করে ভোটাধিকার স্থগিত রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরিবর্তে আগামী ৪ টার্ম পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করবে।
এর মাধ্যমে হানাহানির রাজনীতি বন্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন। সংসদের তিনশ' আসন দুই দলের মধ্যে সমানভাগে ভাগ হয়ে যাবে।
আরেকটি খবর আছে সংবাদপত্রে_ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে। বছর তিনেক ধরেই এ সংগঠনটি আলোচনায়। বলা যায়, নিত্যদিনের সমালোচনা সহ্য করে চলেছে। তবে নেতৃত্বের চোখ-কান বন্ধ বলেই মনে হয়। তারা এসবে গুরুত্ব দেন না। তেমনটি হলে গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আসত_ অন্যায়-অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। সংগঠনের নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশোধনী আসতে পারত। এর পরিবর্তে সংশোধনী এসেছে_ বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটির সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হবে। নেতাদের যুক্তি হচ্ছে_ সংগঠন বড় হয়েছে। পদপ্রত্যাশাী অনেক। তাদের খুশি রাখা দরকার। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সংগঠনের কর্মীরা মনে করেন যে, কোনো না কোনো কমিটিতে থাকলে সে পরিচয় কাজে লাগিয়ে নানা সুবিধা হাসিল করা যায়। প্রশাসন ও পুলিশ ম্যানেজ করাও এর ফলে সহজ। ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বলেছেন, ছাত্রনেতাদের দেখলে মানুষ ভয় পায় সেখানেই গঠনতন্ত্রের ওই সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে ভীতি বাড়বে, না কমবে_ কে জানে!
নাজমুল হুদা নির্বাচন তুলে দিতে চান। দুটি দল ক্ষমতা নেবে ভাগাভাগি করে। দেশটি যেন পারিবারিক সম্পত্তি! ক্ষমতা নিয়ে কী করবেন তারা? দেশের উন্নয়ন, নাকি সম্পদ ভাগাভাগি? ১৯৯১ সালের পর থেকে মাঝের দুটি বছর বাদ দিয়ে এ দুটি দলই দেশের ক্ষমতায়। নাজমুুল হুদা আরও ২০ বছর এ সুবিধা দিতে প্রস্তাব করেছেন। তার মত পোষণ করেন, এমন অনেক মানুষ থাকতে পারে। তারা মুখ খুলবেন_ এটিই চাইব। ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের অনেক নেতাই এ মতের সমর্থনে দাঁড়াতে পারেন। দুই দশকেরও বেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। কলেজগুলোতেও নেই নির্বাচন। যখন যে দল দেশের ক্ষমতায় থাকছে সে দলের ছাত্র সংগঠন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়ায়। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ নিয়ে তাদের ভাবনা নেই, নেতাদের আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা মিটলেই হলো। নির্বাচন তো দূরের কথা, বিরোধী পক্ষকে ক্যাম্পাসেই প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। নাজমুল হুদার ফর্মুলা প্রয়োগ হবে দেশের জন্য। অর্থাৎ ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে যা করেছে তার প্রয়োগ হবে গোটা দেশে। এ কারণে এ দুটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা তাদের মুরবি্ব রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতার বিশেষ হিস্যা দাবি করতে পারেন। তারা যা করে দেখাচ্ছেন তা জাতীয়ভাবে গ্রহণ করার কমিশন হিসেবে ধরে নেওয়া যায় এটিকে।
গণতন্ত্রের কী অসাধারণ ফর্মুলাই না দিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা! তিনি কি ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এ নিয়ে? না করে থাকলে দ্রুত তা করে ফেলুন। ভালো সমর্থন পাবেন তাদের কাছ থেকে। অর্ধশত বছর বয়সী ছাত্রনেতারা তাকে মাল্যভূষিত করবেনই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যারা নির্বাচনে ভয় পায় তাদের কাছ থেকেও মিলবে বিপুল সমর্থন। তারা ক্ষমতার পাঁচ বছরে আখের গুছিয়ে নেবেন এবং পরের পাঁচ বছর আনন্দে-ফুর্তিতে কাটানোর জন্য তা ব্যয় করবেন। যেহেতু ফর্মুলা অনুযায়ী হানাহানি থাকবে না সেহেতু ক্ষমতা চলে গেলেও জেল-জুলুম-মামলার ভয় নেই একেবারেই।

No comments

Powered by Blogger.