সরকারের এত ঢাক গুড়গুড় কেন-পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে। সবশেষ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যে এটুকু স্পষ্ট হলো, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহ থাকলেও তা কাজে আসছে না। এর আগে পদ্মা সেতুবিষয়ক উইকিলিকস থেকে জানা গিয়েছিল, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নানাভাবে ঘনিষ্ঠ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টির সঙ্গে বিতর্কিত যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন আলাপ-আলোচনা চালিয়ে


আসছিলেন। মরিয়ার্টির যে দুটো তারবার্তা আমরা পেয়েছি, তার দুটোতেই তাঁর সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সেটা থেকে বোঝা যায় না প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে, তার ধরনটা কী এবং তাতে যোগাযোগমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না। অবশ্য জনগণ শুধু এটা জেনেই অবাক যে বর্তমান মন্ত্রী কী কারণে যোগাযোগের মতো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। মন্ত্রীর সততার সনদ সংগ্রহ এবং অন্যান্য সাফাই বক্তব্য তাঁর মলিন ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করতে তেমন ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করার কারণ নেই।
পদ্মা সেতু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিকতা বোধগম্য। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরকার কেন নির্বিকার, তা বোধগম্য নয়। অভিযোগ যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে, সেটা অর্থমন্ত্রীও নির্দিষ্ট করেছেন। এখন আশা করা যায়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোন স্তরে এবং কখন দুর্নীতি ঘটেছে বলে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তুলেছে, তা সরকার স্পষ্ট করবে। অর্থমন্ত্রী আরেকটি বিষয় বলেছেন, যাতে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর কথায়, প্রথমত তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম বলা যাবে না। দ্বিতীয়ত, ‘খালেদা জিয়া সরকারের সময়কালের দুর্নীতির জন্য এখনো আমাদের খেসারত দিতে হচ্ছে।’ তার মানে কি সরকার আশ্বস্ত করেছে যে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিষয়ে যে অভিযোগ করেছে, তার সঙ্গে বর্তমান সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যদি সেটাই সত্য হবে, তাহলে এত ঢাক গুড়গুড় কেন।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডায় ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির দপ্তরে পুলিশ হানা দিয়ে কাগজপত্র জব্দ করেছে। আশা করা যায়, কানাডা থেকে সে বিষয়ে আমরা অচিরেই কিছু জানতে পারব। তবে পরিহাস হলো, বাংলাদেশে কারা জড়িত, তা আমরা কানাডা থেকে প্রাপ্ত খবর থেকে জানব কি না। বা সে জন্য আমরা অপেক্ষা করছি কি না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব কিন্তু এর আগে আমাদের জানিয়েছিলেন, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ করেছে, তা বিএনপি আমলের। বেশ কথা। তাহলে বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিদের তো নাওয়া-খাওয়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়তে কোনো অসুবিধা দেখি না। আমরা আশা করব, দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে আমাদের একটা দিশা দিয়ে তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করবে। পদ্মা সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারের দাবি রাখে।

No comments

Powered by Blogger.