স্বাস্থ্য খাত-দুর্নীতি দূর ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে

জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির আলোচনা-সমালোচনা বন্ধ থাকেনি। সুখের বিষয়, সরকারি দলের সদস্যরাও বিষয়টিকে গুরুতর বিবেচনা করে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জাতীয় সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এটা গণতান্ত্রিক রীতি-প্রথায় অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।


স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এতই বেশি যে, জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় এ বিষয়টি উত্থাপন এ মুহূর্তে অতি জরুরি ছিল। সরকারি দলের সদস্যদের মুখ থেকেই যখন এই খাতের দুর্গতি সম্পর্কে আলোচনা হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, প্রকৃত অবস্থা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। দুরবস্থা যে শুধু চিকিৎসকসহ জনবলের অভাবজনিত, তা-ই নয়, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রাও অস্বাভাবিক। গরিব দেশ হিসেবে আর্থিক সংকটের কারণে সেবা বিঘি্নত হলে হয়তো বলার তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, এই খাতে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, সেই অনুপাতে সেবা পাওয়া যায় না। জনবল সংকট নিরসনের জন্য গত তিন বছরে চিকিৎসকসহ মোট ৩৯ হাজার লোক নিয়োগ করার পরও এই খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুরো প্রক্রিয়াকে বিঘি্নত করছে। সেখানে দলীয়করণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীর ভাষ্যেই তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে দেশে মারামারির মতো ঘটনা ঘটেছে। দলীয়করণের ক্ষেত্রে কতটা নির্লজ্জ অবস্থা হলে তা জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় স্বয়ং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পর্যন্ত এভাবে বলতে পারেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বিব্রতকর। সরকারি চিকিৎসালয়ে চিকিৎসকরা কর্তব্য পালন করেন না। নিয়মিত উপস্থিত না হওয়াটা তাঁদের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। কাউকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কিংবা উচ্চতর প্রশিক্ষণের উছিলায় ঢাকায় চলে আসাটাও যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। এ কারণে ঢাকার বাইরে স্বাস্থ্যসেবা মোটেও সুবিধাজনক নয়। তারই চিত্র জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উপস্থাপিত হয়েছে একাধিক সংসদ সদস্যের মুখ থেকে। অথচ সরকারি দল নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত তিন বছরে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সাফল্য অর্জন করেছে কিংবা কতটা ব্যর্থ হয়েছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ হতে শুরু করেছে। এই বিশ্লেষণের প্রতি সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে এ ব্যবস্থা সম্পর্কে আরো আলোচনা হতে পারে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রভাব বন্ধ করতে হবে। তবে অ্যাডহক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করাই উত্তম। পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হতে পারে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিসিএসও একটি মাধ্যম। সেটাও বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং অর্থ বরাদ্দও নিশ্চিত করা জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.