আমাদের শিশু-কিশোর-অপরাধপ্রবণতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে

নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের সমাজজীবনকে গ্রাস করছে। তার প্রভাব আমাদের জীবনযাত্রা বিঘি্নত করছে, পাশাপাশি মনে করিয়ে দিচ্ছে, আগামী সময়টা ঘোলাটে হওয়ার সমূহ আশঙ্কার কথাও। অন্তত শিশু-কিশোরদের মধ্যে যখন সামাজিক অবক্ষয়জনিত ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা যেতে থাকে, দেখা যেতে থাকে নানা রকম অপরাধপ্রবণতা, তখন প্রশ্নের


মুখে পড়তে হয়- আমাদের গন্তব্য কোথায়? আগামী দিনগুলো কি তাহলে শান্তিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে?
কিশোর বয়সে দুরন্তপনা থাকা স্বাভাবিক। অনুসন্ধিৎসু মন তাদের অভিযানপ্রত্যাশী করে তোলে। সব কিছুতে নতুনকে খোঁজার প্রবণতা তাদের জন্য নিত্য বিষয়। কিন্তু সেই অনুসন্ধানী মন যদি নেতিবাচক দিকে পরিচালিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের ভাবনায় পড়তে হয়। দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় যখন দেখা যায়, কিশোরদের অভাব না থাকার পরও চুরি-ছিনতাইয়ের মতো কাজে তারা লিপ্ত হয়ে পড়ে। স্বভাবজাত বন্ধুত্বকে তারা সৃষ্টিশীল কাজে ব্যবহার না করে নৈতিকতাবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। মাঝেমধ্যে কিশোরদের এমন কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সংবাদ পড়তে হয় আমাদের। বুঝতে অসুবিধা হয় না শিশু-কিশোরদের মধ্যেও অপরাধপ্রবণতায় সম্পৃক্ত হওয়ার পেছনে বড়দের ভূমিকা কতটা। আর পরিবেশগত অসংগতিও তাদের অনেকটা প্রলুব্ধ করে অপরাধের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে নিতে। কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা নিয়ে সম্প্রতি একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে পত্রিকান্তরে। সেখানে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ছয় কিশোর নকল চাবি বানিয়ে কিভাবে খালি বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। সংবাদ থেকে জানা যায়, এই ছয় কিশোরের সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান।
এখানেই প্রশ্ন আসে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তারা এ ধরনের চুরির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। শিশুমনস্তাত্তি্বক বিশ্লেষণ করলে তাদের এই পথে আসার মানসিক কারণগুলো সম্পর্কে জানা যাবে। বোঝা যাবে সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা এভাবে চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে কেন যুক্ত হচ্ছে। যেহেতু এ ধরনের অভিযোগ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়; তাই এর দায় সব কিশোরের বহন করার কথা নয়। কিন্তু অভিভাবকদের ক্ষেত্রে সবারই সজাগ থাকার প্রয়োজন আছে। কারণ বের করে সেই সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে হবে। কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনতে তাদের জন্য খেলাধুলা এবং সুস্থ ও সৃজনশীল বিনোদন মাধ্যম সহজলভ্য করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো আকর্ষণীয় করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিটি অভিভাবককে সন্তানদের কিছুটা হলেও সময় দিতে হবে। যাতে তাদের মধ্যে একাকিত্ব কিংবা নেতিবাচক কোনো প্রভাব না পড়তে পারে। যৌথ পরিবার প্রথা ক্রমেই হ্রাস পাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবেও কিশোররা নেতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হতে পারে। যেকোনো সমস্যারই সমাধান আছে। সে বিবেচনা থেকেই আমাদের কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা থেকে মুক্ত রাখতে এবং সুন্দর পথে পরিচালিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.