পিংক সিটি জেনোভ্যালি-‘অনিয়মের’ প্রতিবাদ করে বাসিন্দারা বিপদে

সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে থাকার আশা নিয়ে বাড়ি কিনলেও রাজধানীর খিলক্ষেতের পিংক সিটি জেনোভ্যালি প্রকল্পের বাসিন্দারা সুখে নেই। বাড়ি ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত স্থান রাখা, বহুতল ভবন না তোলাসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ছাড়াও চুক্তির অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে।


এসবের প্রতিবাদ করায় পানি-বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এমনকি গুলি চালিয়ে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। বাসিন্দাদের দিন কাটছে আতঙ্কের মধ্যে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অনিয়মের প্রতিবাদে ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন বাড়ির মালিকেরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর দুই দিন পর এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ভীতির সৃষ্টি করা হয়। এরপর কেটে দেওয়া হয় পানি-বিদ্যুতের লাইন। সব মিলিয়ে চরম উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় আছে এখানকার ২০০ পরিবার।
জেনোভ্যালি কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে।
খিলক্ষেতের অদূরে ডুমনিতে পিংক সিটি নামের এই আবাসিক এলাকার অবস্থান। জেনোভ্যালি মডেল টাউন প্রাইভেট লিমিটেড ২০০৪ সাল থেকে এখানে বাড়ি বিক্রি শুরু করে। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, ডুপ্লেক্স ইকো-হোম নির্মাণের অঙ্গীকার করে তাঁদের কাছে বাড়ি বিক্রি করা হয়। তখন বলা হয়েছিল যে প্রকল্পের মধ্যে কোনো বহুতল ভবন থাকবে না। এ ছাড়া প্রকল্পের মাঝ বরাবর থাকা ডুমনি প্রাকৃতিক খালকে সুদৃশ্য জলাধারে রূপান্তরিত করা হবে। প্রকল্পের মধ্যে খেলার মাঠ, স্কুল, মসজিদ, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, দোকানপাট—সবই থাকবে। ওই বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ সব শর্তই ভেঙেছে।
পিংক সিটির বাসিন্দাদের সংগঠন হোম ওনার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের ভেতরে ৩০ বছর পর্যন্ত কেউ কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু কিছুদিন আগে খেলার মাঠের চারদিকে বেষ্টনী দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৯ সালে ডুমনি খাল অবৈধভাবে ভরাটের চেষ্টা চলে। তখন অধিবাসীরা খাল ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এখন জেনোভ্যালি কর্তৃপক্ষই এই খাল ভরাটে ব্যস্ত।
পিংক সিটির বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, জেনোভ্যালি কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা, হয়রানি ও চুক্তির অতিরিক্ত টাকা আদায় করে সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে। তাঁরা জানান, আইন অনুযায়ী দখল দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে বাড়ির নিবন্ধন করে দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ বাড়ির ক্ষেত্রে তা হয়নি। গত বছরের জুন মাসে ৩৫ জন ক্রেতা নিবন্ধনের জন্য টাকা জমা দিলেও নিবন্ধন করে না দিয়ে বাড়তি টাকা দাবি করা হয়েছে। যাঁদের বাড়ির নিবন্ধন আছে, তাঁদের কাছ থেকেও বাড়তি তিন-চার লাখ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
বাসিন্দারা আরও বলেছেন, হোম ওনার্স বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কাছে কর্তৃত্ব হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনো তা করা হয়নি। ফলে জেনোভ্যালি কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো বিদ্যুতের বিল, জেনারেটর চার্জ আদায় করছে। বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে সমিতির নামে আদায় করা এক কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জেনোভ্যালি কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
তরিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেইন, আমানউল্লাহসহ কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করার পর ভয় দেখানো ছাড়াও এলাকার আনসারদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ, এমনকি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন এ অবস্থা চলার পর তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমস্যার সমাধান হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পানির পাম্পঘরের তালা ভেঙে লাইন সচল করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশে থাকব বলে আমরা এখানে বাড়ি কিনেছিলাম। কিন্তু এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আনসার সরিয়ে নিয়েছে বলে রাতে আমরা পুরুষেরা দল বেঁধে পাহারা দিই। সব মিলিয়ে আমরা খুব আতঙ্কে আছি।’
পিংক সিটি জেনোভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের মুঠোফোন গত রাতে বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসিন্দারা যেসব অভিযোগ করছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, তাঁরা পাঁচ কাঠা, তিন কাঠা কিংবা দুই কাঠা জমির মালিক। তাঁরা কখনোই পিংক সিটির পুরো মালিক নন। কাজেই বাসিন্দাদের অনধিকার চর্চা করা উচিত নয়।’
বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে ব্যবস্থাপক বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে এমন সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।

No comments

Powered by Blogger.