রাজনীতিতে সহিষুষ্ণতা আসবে কি? by মোঃ জাহেদুল ইসলাম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমাগত অসহিষুষ্ণতা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ উত্তাল রয়েছে একদল কর্তৃক অন্য দলের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার পথ আজ এ দেশে বন্ধ হতে বসেছে। সরকার এবং বিরোধী দল একসঙ্গে এখন সংসদে বসতে পারে না। সংসদ বর্জনের রীতি এখন নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।


ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তি, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু ইত্যাদিতে সরকার এবং বিরোধী দলের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। এসব অসহিষুষ্ণ আচরণ দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার পথ প্রায় বন্ধ করতে বসেছে। এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপতির সংলাপের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশবাসী। যার মাধ্যমে একটি সহিষুষ্ণ এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার পথ তৈরি হবে বলে সকলে আশা করেন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনাও সম্পন্ন করেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও এই সংলাপে যোগ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সংলাপের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা কতটুকু সফল হবে বা হবে না_ তা নির্ভর করবে সরকারের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণের ওপর।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার যদি এককভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নতুন নিয়োগদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলেই আমার বিশ্বাস। সুতরাং সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে সংলাপ ও মতবিনিময়ের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ছাড়া সরকার ও গোটা জাতির জন্য আর কোনো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এবং এ গুরুদায়িত্ব পালনে যে জাতীয় সংস্থার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ও মুখ্য সেটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সে জন্যই বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দেশে জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে কি হয়নি অথবা কোথাও পুনর্নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন আছে কিনা, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধু নির্বাচন কমিশনের। আমাদের বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র বলে পরিচিত ওই দেশে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ আজ রাষ্ট্রপতির সংলাপের দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তিনিই পারেন দেশে একটি দক্ষ নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে। দেশকে সম্ভাব্য সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে একটি সহিষুষ্ণ রাজনীতি চর্চার সুযোগ করে দিতে। তাই রাষ্ট্রপতির সংলাপের ফল কী হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
য় শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.