ওয়াকাতেই ওয়ার্নারের রুদ্র রূপ!

তির রাজ্য ওয়াকায় এর আগে খুব বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা হয়নি। যে কটি খেলেছেন, তাতে রান তাঁর কাছে হয়ে ছিল মরীচিকা। ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ তো প্রথম খেললেন এই টেস্ট দিয়ে। অভিজ্ঞতার সামান্য পুঁজি নিয়ে নেটে অনুশীলন করতে গিয়েই বুঝলেন, সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে না। মিচেল স্টার্কের বলে যখন উপড়ে গেল স্টাম্প, নেটেই একরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেন, আর যা-ই হোক, ওয়াকায় রান করা তাঁর কম্মো নয়।


সেই ডেভিড ওয়ার্নার কাল পার্থ টেস্টের শেষ সেশনে যা করলেন, সেটাকে একটা শব্দেই ব্যাখ্যা করা যায়—তাণ্ডব! ৬৯ বলে সেঞ্চুরি। যৌথভাবে টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ দ্রুততম। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তৃতীয় দ্রুততম, আর যদি মাঠ নেওয়া হয় বিবেচনায়, পার্থে এটি দ্বিতীয় দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরি।
১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ভারতীয় বোলারদের নাকের জল, চোখের জল এক করে দিয়েছেন। স্ট্রেট ড্রাইভে ইশান্তের বলে মারা ছক্কাটি তো ছিল অবিশ্বাস্য। ওয়ার্নারের ব্যাটের আগুনে পুড়েছেন অভিজ্ঞতম জহির খান থেকে নবীনতম বিনয় কুমার পর্যন্ত সবাই। বছর তিনেক আগে ৪৩ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তবে সেটা ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। কাল ওয়ার্নার বুঝিয়ে দিলেন, তিনি রিচার্ডস-শেবাগীয় দর্শনেরই অনুসারী—বল জিনিসটা হলো মারার, সেটি টেস্ট ক্রিকেট হলেই বা কী!
ওয়ার্নারের এই বিবৃতি থাকল তাঁর ব্যাটে। দিন শেষে ১০৪ রানে অপরাজিত এই বাঁহাতি কিন্তু মুখে বললেন অন্য কথা। নিজেই জানালেন, এই ম্যাচে ভালো করার ব্যাপারে রীতিমতো সংশয়ে ছিলেন নেট অনুশীলনের সময়, ‘বলেছিলাম, “দূর, আমাকে দিয়ে হবে না। এমন পরিবেশে আমি খেলতে পারব না।” ব্যাটে বলই লাগাতে পারছিলাম না। মাইক হাসির কাছে গিয়ে বললাম, এখানে এর আগেও বেশ কবার ব্যাটিং করেছি। কিন্তু কোনো রান করতে পারিনি।’
তবে কি ওয়াকার পেস আর বাউন্সই সমস্যা করছিল? না। সমস্যা হচ্ছিল শট খেলার সময় শরীরের ভারসাম্য নিয়ে। ফ্রন্টফুটে খেলার সময় মাথাটা সোজা থাকছিল না ওয়ার্নারের। ঝুঁকে যাচ্ছিল সামনের দিকে। কোচ মিকি আর্থার ও ব্যাটিং কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারেরও এটি চোখে পড়ে। তাঁদের তত্ত্বাবধানে গত কয়েক দিন এই ত্রুটিটাই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। শেষ পর্যন্ত শেষ অনুশীলন সেশনে গিয়ে সমস্যা দূর হয়েছে। এরপর যা করলেন, তাতে তো রীতিমতো বজ্রাহত ভারতীয় বোলাররা।
রান যখন ৮০, সে সময় উমেশ যাদবের বাউন্সার হেলমেটে এসে আঘাত করে। বেশ কিছুক্ষণ শুশ্রূষাও নিতে হয়েছে। তবে ওয়ার্নার জানালেন, ওই আঘাতে নয়, তিনি চমকে গিয়েছিলেন অন্য কারণে, ‘আমি আসলে টেরই পাইনি মাত্র ৪০ বল খেলেই ৮০ রানের মতো তুলে ফেলেছি। বোঝার পর আসলে চমকেই গিয়েছিলাম।’ একটু যেন কৃত্রিম অনুশোচনাও তাঁর হচ্ছিল, ‘নিজের স্ট্রাইক রেটের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, নাহ্, এটা টেস্ট ক্রিকেট নয়, এটা অন্য কিছু। কিন্তু আসল ব্যাপারটি হলো, আমি ক্রিকেট বলতে এটাই বুঝি।’
অস্ট্রেলিয়া চাইবে, এই দর্শনেই অবিচল থাকুন ওয়ার্নার। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.