এইবার মাইর খাইলে আত্মহত্যা করবঃ আলুচাষী by আল মাসুদ নয়ন

‘চাষীরা দড়ি পাকাইয়া আলু চাষ করতাছে। এইবার আলুতে মাইর খাইলে আত্মহত্যা করব।’ বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের আলুচাষী কিষাণী ইভা রাণী মণ্ডল। শুক্রবার প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক সংহতি, সিএসআরএল এবং কর্মজীবী নারী আয়োজিত ‘সমস্যা সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে আলুচাষীদের ফরিয়াদ সভা’

শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত আলুচাষীরা এভাবেই তাদের ফরিয়াদ ব্যক্ত করেন। মানিকগঞ্জের অপর এক আলুচাষী কিষাণী চম্পা আক্তার বলেন, ‘লোন আইন্যা, বর্গা চাষ কইরা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইছি! আপনেরা কইন আমরা আলু চাষ করমু কি না? যুদি আলু বিক্রি অয় তাইলে আমরা আলু চাষ করমু তা না অইলে করুম না। বাদ দিমু।’

অলুচাষী সজিব খান পাশা বলেন, ‘৪০ মন আলু কলস্টরও (হিমাগারে) রাখছিলাম। ২০ মন উডাইছি । বাকিগুলা আর উডাই নাই । নষ্ট অইছে। পোষায়না। কিছু আলু গরুরে খাওয়াছি।’

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থেকে আসা আলুচাষী আইয়ুব আলী জানান, গত ২ বছরে আলু চাষীরা কেউ গলায় দড়ি দিয়েছে, কেউ সহায় সম্ভল বিক্রি করে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঢাকায় এসে বস্তিতে  উঠেছে। তিনি শ্রীনগরের আটপাড়া নামক এক হিমাগারে আলু রেখেছিলেন কিন্তু আলু উঠাতে পারেননি। ভাড়া না দিতে পাড়ায় হিমাগারের মালিক তাকে আলু বের করতে দেয়নি।

মুন্সিগঞ্জ, সিরাজদিখান এবং শ্রীনগর এলাকার অধিকাংশ অালুচাষীর মাঝে আজ হাহাকার বিরাজ করছে বলে তিনি জানান।  
  
আলোচনা সভায় জানানো হয়, গত বছর দেশের উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী-রংপুর বিভাগে ৬০ লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিল। জমি ভাড়া এবং শ্রমমজুরী বাদ দিয়ে কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ হয় ৫ থেকে ৬ টাকা। কিন্তু বাধ্য হয়ে সেই আলুই ৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়েছে। ভোক্তা অধিক দামে আলু কিনলেও আলুচাষীরা তাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দেশে বেসরকারিভাবে ৩৫০টির মত হিমাগার থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। তাছাড়াও, হিমাগারের ভাড়া দিয়ে আর উৎপাদন খরচ মিলিয়ে চাষীরা শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘ আলু উপদেষ্টা বোর্ড’ থাকলেও তা আলু চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় সম্পূর্ণ অকার্যকর।

এদিকে, ওই অলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি আলু চাষীদের বর্তমান সঙ্কট দূরীকরণে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

এছাড়া, তিনি আলু নির্ভর শিল্প স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আলোচনা সভায় সাংসদ আনিসুল হক মণ্ডল বলেন, ‘৫০ গ্রামের একটি চিপস্ ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আলুর ওপর নির্ভরশীল এ চিপ্স। অথচ, আলুর দাম মাত্র ৩ টাকা কেজি।’ এছাড়াও তিনি ভারতীয় উচ্চ মূল্যের চিপস লেইসের কথা তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ মালিক সমিতির সভাপতি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আলু চাষ বন্ধ করে দিলে সরকার আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আমাদের দেশের আলু  অন্যান্য দেশের আলুর তুলনায় অনেক সুস্বাদু। আমাদের আলু চাষীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বিরোধী দল অনেক বিষয় নিয়ে অনেক ধরনের ইস্যু দিয়েছে। কিন্তু আলু কিংবা আলু চাষীদের কথা বিরোধীদল একটিবারও বলেনি।’

তিনি জানান, আলু চাষীদের সমস্যার বিষয়ে বিরোধীদলসহ সরকারের সংশ্লিষ্টমহলে তিনি বার বার চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।

No comments

Powered by Blogger.