ছবি দেখে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা-পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার হয়নি

রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ের কাছ থেকে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রটির খোঁজ মেলেনি। অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ধারণ করা ভিডিও ও স্থিরচিত্র দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মতিঝিল পুলিশ ফাঁড়ির টহল পরিদর্শক (পিআই) আবুল বাশারের ওপর অতর্কিত হামলা করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ পরিদর্শককে রক্তাক্ত জখম করে তাঁর কোমরে থাকা গুলিভর্তি পিস্তলটি লুট করেন।


জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে দেশব্যাপী ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালনের নামে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এই গোপন কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচির সময় ও স্থান গোপন রাখা হয়।
মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হায়াতুজ্জামান জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটির একটি দ্রুত বিচার আইনে, অন্যটি পুলিশকে মারধরের অভিযোগে। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন নাকিবুল হাসান, জাফর শেখ, সাইফউদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আবদুর রউফ ও মাঈনু। এ ঘটনায় শিবিরের তিন কর্মী নকিবুল হাসান, নাসির উদ্দিন মো. জায়েদ ও আজিজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এঁদের দুজনের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়, একজনের গাজীপুরে। এঁরা সবাই মাদ্রাসার ছাত্র।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করছে। তিনি বলেন, জামায়াতের গোপন কর্মসূচি পালন করতে রাজধানীর বাইরে থেকে শত শত জামায়াত-শিবির কর্মীকে ঢাকায় আনা হয়। তাঁরা সবাই আলাদাভাবে সাধারণ যাত্রীবেশে ঢাকায় আসেন। এরপর দলের নির্দেশনা অনুসারে তাঁরা একযোগে পুলিশের ওপর হামলা চালান।
মতিঝিল থানার পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া তিন যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তাঁরা গাজীপুরের তামিরুল মিল্লাত নামের একটি মাদ্রাসার ছাত্র। ঢাকার কর্মসূচি হিসেবে তাঁরা আগেই ওই মাদ্রাসায় জড়ো হন। এরপর মাদ্রাসা থেকে একে একে ঢাকায় চলে আসেন।
তদন্তে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানতে পারেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের পশ্চিম পাশ থেকে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ কর্মী ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ সময় আশপাশের ফুটপাতে পথচারীর বেশে আরও কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। মিছিলটি দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশ থেকে এক-দেড় হাজার কর্মী যুক্ত হন। পুলিশের টহল পরিদর্শক বাশার এ সময় মিছিলের সামনে পড়লে ১০-১২ জন শিবিরকর্মী তাঁর ওপর হামলা চালান। তাঁরা বাশারকে মারধর করে তাঁর কোমরে থাকা পিস্তলটি কেড়ে নেন।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় ধারণ করা ছবি দেখে তাঁরা জানতে পারেন, গোলাপি শার্ট ও কালো ব্লেজার পরা এক যুবক বাশারের কোমর থেকে পিস্তলটি ছিনিয়ে নিয়েছেন। এ সময় ওই যুবকের সঙ্গে আরও সাত-আটজন যুবক ছিলেন। এঁদের মধ্যে নীল শার্ট ও কালো চাদর গায়ে দেওয়া এক যুবক গাড়িতে আগুন ধরানোর কাজ করেন। পুলিশ ছবি দেখে ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনায় ১০-১২ জন মূল ভূমিকা পালন করেন। ছবি দেখে এঁদের সবাইকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.