বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় by মামুনূর রশীদ

ত ১ জানুয়ারি সমকালে প্রকাশিত ড. তারেক শামসুর রেহমানের 'বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা' লেখাটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ দেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে প্রচলিত অভিযোগগুলোই আবার উপস্থাপন করেছেন।


এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কেন আসতে দেওয়া হবে, এই সিদ্ধান্তের জন্য মূল বিষয়গুলো নিম্নরূপ : ১. এতে কি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে; ২. এই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালগুলো কি আমাদের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মূল্যবান মাত্রা যোগ করবে? ৩. এরা কি আমাদের জাতীয় সত্তা বা কৃষ্টির সঙ্গে সাংঘর্ষিক শিক্ষা বা কার্যক্রম ঘটাতে পারে? পরিশেষে এরা আসায় কি দেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষার মান উন্নত হবে?
হেডলাইনের 'সার্টিফিকেট বাণিজ্য' কথার সূত্র ধরে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। দেশিরা সার্টিফিকেট বাণিজ্য করলে, বিদেশিরা কেন একই সুযোগ পাবে না_ এটাই যেন তার যুক্তি! গত দু'বছর ধরে সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এক একর অখণ্ড স্থায়ী ক্যাম্পাস' স্থাপনের শর্তে রীতিমতো হেনস্তা করে ছেড়েছে। কিন্তু ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ধারা বলে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিধিমালার শর্ত বিস্ময়কর রকম শিথিল; বিদেশি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২৫ হাজার বর্গফুট ভাড়া বাড়িই পর্যাপ্ত এবং ট্রেনিং-কোচিং সেন্টারগুলোর ক্ষেত্রে ৩ হাজার বর্গফুটের ভাড়া বাড়িই যথেষ্ট।
এ ধরনের দৃষ্টিকটু বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়দের প্রতিষ্ঠাতাদের সমালোচনা করা কি খুব যুক্তিসঙ্গত? আন্তর্জাতিক এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনকে সরকার বিনা মূল্যে ১৩০ একরেরও অধিক জায়গা দান করেছে। দেশীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যেখানে সরকার এক একর করে জমি দিতেও অপারগ, সেখানে বিদেশিদের প্রতি এমন উদারতা দুঃখজনক।
আমি যেখানে পড়াই সেখানে ছাত্র বিক্ষোভের মুখে সরকার আইনের ধারা বাতিল করার ঘোষণা দেয়। সঙ্গত বিষয়ে সরকার দ্রুত ও সদয় সিদ্ধান্ত আমাদের খুশি করেছে। কিন্তু সরকারের এ ধরনের উদারতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না কেন?
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিনামূল্যে বিস্তর জমি না দেওয়া হোক, তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসের মতো দুরূহ ও ব্যয়বহুল কাজের জন্য যে বাড়তি সময় চাচ্ছে সেটা দিতেও এত অনীহা কেন? যাদের বয়স ১৫ বা তারও বেশি তাদের কথা থাক, মাত্র সাত-আট বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়েরই-বা কেন ভর্তি বন্ধের হুমকিতে জর্জরিত করা হচ্ছে? এদিকে আবার শিথিলতার শর্তে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগমনের সুযোগ!
আমাদের নামকরা শিক্ষাবিদদের প্রায় কখনোই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গত যুক্তির পক্ষেও কেন বলতে দেখা যায় না? তাদের শিক্ষার্থীরাও কি এ দেশের সন্তান নয়? সঠিক শর্তে মানসম্পন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশে এলে আমরা অবশ্যই তাকে স্বাগত জানাব। অন্যথায় তাদের আসতে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
লেখক তার লেখায় উল্লেখ করেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটিতে যারা শিক্ষাদান করেন, তাদের পাঠদানের আদৌ কোনো অভিজ্ঞতা নেই; কিন্তু একথা তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও প্রযোজ্য, কারণ সেখানেও যারা প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান তাদের প্রায় সবারই আগের কোনো শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকে না। সুতরাং এ অভিযোগ অনেকটাই একপেশেই মনে হয়।
তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এক শিক্ষক প্রসঙ্গে অভিযোগ করেছেন যে, তার কোনো অনার্স ডিগ্রি নেই। আমার জানা মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক সিনিয়র শিক্ষকেরই অনার্স ডিগ্রি নেই। তারা বিএ পাস কোর্স শেষে মাস্টার্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির ব্যাপারে লেখক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেননি। তিনি বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেতে হলে ১৫ থেকে ১৭ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই ১২ বছরের মধ্যে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া স্বাভাবিক রেওয়াজ।
য় মামুনূর রশীদ : প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.