তৈরি পোশাক শিল্প-উদ্যোক্তাদের শঙ্কা দূর করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শক্তি পোশাক শিল্প খাত নিয়ে উদ্যোক্তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন। ২২ অক্টোবর সহযোগী একটি দৈনিকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে তাঁদের শঙ্কার নানা কারণ তুলে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন আমাদের তৈরি পোশাকের বাজার আরো বিস্তৃত করতে পোশাক শিল্পের কর্ণধাররা তৎপর, ঠিক তখনই তাঁদের শঙ্কার কারণগুলোও পুষ্ট হয়ে উঠছে দেশের বিরাজমান নানা পরিস্থিতির কারণে।


সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা তো আছেই, পাশাপাশি দীর্ঘদিন যাবৎ বিরাজমান সমস্যাগুলো যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনেরও যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্বেগজনক সংবাদ হলো_সম্প্রতি ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি অর্ডার কমছে, যা সার্বিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জ্বালানি সংকটের কারণে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ কথা সত্য, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রপ্তানি অর্ডার কার্যকর করতে গিয়ে এমনিতেই এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ কমে গেছে। তন্মধ্যে বিদ্যমান নানাবিধ সংকটের কারণে ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী পণ্য জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সময়মতো পণ্য না পাওয়ার কারণে অন্য দেশের পণ্যের বেশি দাম হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেদিকেই ঝুঁকছেন। বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় দফায় মন্দার আশঙ্কায় এমনিতেই আবার বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে যোগ হচ্ছে আমাদের সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতা। অস্বীকার করার উপায় নেই, রাজনৈতিক অস্থিরতায় পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত ঝুঁকি থাকে। ইউরোপের বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও তা পূরণ করা যাচ্ছে না উলি্লখিত কারণে। এ ক্ষতি জাতীয় অর্থনীতির এবং শিল্পের। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে গড়ে উঠেছে বিশাল শ্রমবাজার এবং বেকারত্ব নিরসনে খাতটি ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে; কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নেতারা ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা সেসব বিষয় কতটা আমলে নিচ্ছেন প্রশ্ন সেটিই। এ খাতে নানাদিকে সরকারের সহায়তাদানের প্রতিশ্রুতি থাকলে তাও যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিরসনে অধিকতর গুরুত্ব দিতেই হবে। দেশের অর্থনীতি, শ্রমবাজার, শিল্পের বৃহৎ স্বার্থে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরাজমান অনৈক্যের দাগ মুছে ফেলতে হবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা রাজনীতির বড় দায়। এ দায়ভার রাজনৈতিক নেতারা এড়াতে পারেন না। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পেও নানা রকম অসন্তোষ আছে। তা দূর করার দায় শিল্পের কর্ণধারদের। শ্রমিকদেরও বৃহৎ স্বার্থের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এ খাতের সুরক্ষার জন্য সরকার, মালিক, শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতা বা বোঝাপড়াও খুব জরুরি। এ খাতটি বিপন্ন হলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

No comments

Powered by Blogger.