ঝুলে আছে বড়দহ সেতু

নির্বাচনকালে এলাকার বর্তমান এমপি মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকল আধুনিকায়ন, যেকোনো একটি স্কুল-কলেজ সরকারিকরণ, সড়ক উন্নয়ন এবং পৌর এলাকায় খলসি সেতু নির্মাণসহ গাইবান্ধা তথা গোবিন্দগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি কাটাখালী নদীর ওপর বড়দহ সেতুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটলেও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পূরণে তিনি খুব সামান্যই সফল হয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।


গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী নদীর ওপর নির্মাণাধীন বড়দহ সেতুর কাজ শুরু হয় ১৯৯৭ সালে, যা গত ১৪ বছরেও শেষ করা যায়নি। দুই বছরের মধ্যে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে শতকরা মাত্র ৩০ ভাগ। আগের সংসদ সদস্যরা কেউই তাঁদের সময়কালের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু এর এক বছরের মাথায় হঠাৎ করে কাটাখালী নদীর দক্ষিণ পাশে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পার্শ্ববর্তী কাজলা গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ে। আর এ কারণে নির্মাণাধীন সেতুর অবকাঠামো এলাকা থেকে নদীপাড়ের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে ওপাশে আরেকটি স্প্যান নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেই মোতাবেক প্রকল্পের আগের নকশা পরিবর্তন করে নতুন একটি নকশা তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই নকশার অনুমোদন পেতে না পেতেই সেতু এলাকায় আরেক বিপর্যয় ঘটে। এবার কাজলা এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়ে নদীর অপর পাশে বড়দহ গ্রামের দিকে ভাঙন শুরু হয়। ওই এলাকায় নদী বেশ প্রশস্ত হয়ে পড়ে। ওই পথে চলাচলকারীদেরকে এখন নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ২০০৮ সালের শেষ দিকে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে ওই সেতুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। দুটি অসমাপ্ত স্প্যানসহ নদীর ডান ও বাম তীর সিসি ব্লক দ্বারা সংরক্ষণ এবং অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে ব্যয় অনুমোদন করা হয় আরো ১২ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার টাকার। ঢাকার এমবিইএল-এমএসসি জয়েন্ট ভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় জনগণের প্রত্যাশা আবারও বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি কাজ শুরু করে চলতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার কথা ওই প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু হঠাৎ করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ওই সেতুর নির্মাণকাজ। বার বার তাগিদ দিয়েও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সক্রিয় করে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বানের চিন্তা-ভাবনা করছে। ফলে সেতুটি নির্মাণকাজ আরেক ধাপ পিছিয়ে পড়ল বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে। সেতুটির অসমাপ্ত কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, এখন আর তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

No comments

Powered by Blogger.