খুলনা থেকে সাতক্ষীরা ও পাইকগাছা যানবাহন চলাচল দুই মাস বন্ধ

তিবৃষ্টিতে কপোতাক্ষ অববাহিকায় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার কবল থেকে দুই মাসেও খুলনা-পাইকগাছা ও খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক মুক্ত হতে পারেনি। ফলে এ দুই সড়কে সরাসরি যান চলাচলও শুরু হয়নি। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ দুই রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক থেকে পানি সরে যাওয়ার পর মেরামত হলে সড়ক দুটিতে আবারও যান চলাচল করতে পারে।


খুলনা-পাইকগাছা সড়কের তালা ব্রিজের মোড় থেকে কাচিঘাটা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় আগস্টের ৯ তারিখ থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে খুলনা থেকে তালা পর্যন্ত বাস চলাচল করছে। পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল আরো আগে থেকে বন্ধ হয়ে যায়। খুলনা থেকে পাইকগাছা বা কয়রা যাওয়ার যাত্রীরা এ কারণে তালা পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বিকল্প যানে করে (মোটরসাইকেল, নসিমন, করিমন, ভটভটি প্রভৃতির মাধ্যমে) পাশের গ্রামের রাস্তা দিয়ে কপিলমুনি পেঁৗছায়। সেখান থেকে আবারও পাইকগাছা আর কয়রাগামী যাত্রীরা পাইকগাছা থেকে বাসে করে কয়রা সদর পর্যন্ত পেঁৗছায়।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। তবে পাইকগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামান বলেন, সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে সরকারিভাবে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে রাস্তার দুই পাশে মাটি দিয়ে উঁচু করে সড়ক থেকে পানি অপসারণ করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা যায় কি না সে ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে।
জুলাই মাস থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের নওয়াপাড়া নামক স্থান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত। সাতক্ষীরায় যাওয়ার প্রয়োজনে হালকা যানবাহনগুলো তালা মুক্তিযোদ্ধা কলেজের পাশ দিয়ে চলাচল করছে। আর খুলনা থেকে বাস গিয়ে নওয়াপাড়ায় থামছে। পরে বাসযাত্রীরা নসিমন, নৌকা, ডোঙ্গা প্রভৃতিতে করে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেখান থেকে আবার বাস ধরছে। কবে এই সড়ক থেকে পানি সরবে, কবে সড়ক চলাচলের উপযোগী হবে তা কেউ জানে না।
দুর্ভোগ-যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় লাইলী বেগম বলেন, 'গত চার বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। এরও আগে দুই বছর এ অবস্থা চলেছিল। এখানে বর্ষাকালে পানি ওঠে, সবাই জানে, কিন্তু পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা কেউই নেয় না।'
এ অঞ্চলের নাগরিক সংগঠন 'পানি কমিটি'র সভাপতি অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, 'পানি আটকে যাওয়ার মূল কারণ কপোতাক্ষ শুকিয়ে যাওয়া এবং পাশাপাশি এ বছর অতি বৃষ্টিপাত হওয়া। পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে যেমন বাড়ি-ঘর-ফসল ডুবিয়েছে; তেমনি আন্তজেলা সংযোগ রক্ষাকারী সড়কও ডুবিয়েছে।' সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে বিভাগটি নিয়ে নতুন করে ভাবা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'কেন জানি না, বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও সড়কটির দুর্দশা ঘোচে না। শোনা যায়, টেন্ডার হয়েছে, কাজ হচ্ছে, হবে; কিন্তু হয় না কিছুই। যে কারণে এবারের জলাবদ্ধতার সময় দুর্ভোগ আরো বেশি হয়েছে। অথচ এই এলাকার এমপি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান।'

No comments

Powered by Blogger.