যেন ফিরছেন সেই ছন্দময় কাকা

ফুটবলটা তাঁর কাছে ছিল আনন্দের অবারিত উৎস। তাঁর পায়ের প্রজাপতি-ছন্দে সেই আনন্দ ছুঁয়ে যেত দর্শকদের। প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে বৈশ্বিক শ্রেষ্ঠত্ব তাই লুটিয়ে পড়ল কাকার জাদুকরী পায়ে। আর এসব তো খুব বেশি দিন আগের কথা না।এরপর হামাগুড়ি দিয়ে এল দুঃসময়। ফুটবলটা হয়ে গেল বিষাদের কাব্যগাথা। বিশ্বরেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে দলবদল করলেন, সঙ্গে যেন ভাগ্যবদলও হয়ে গেল। ইনজুরি, ফর্মহীনতায় একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা এই ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকারের। রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার কথাও শোনা যাচ্ছিল জোরেশোরে।

কিন্তু কাকা থেকে গেলেন। শুধু তাই নয়, একটু একটু করে নিজেকে ফেরানোর কক্ষপথে ফিরতে শুরু করলেন। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত যা ফর্ম, তাতে সেই ইঙ্গিতটা স্পষ্ট।
কাকা তাই আবার দিন গুনছেন সুদিনের। আবার যে খেলাটিকে প্রাণ দিয়ে উপভোগ করতে শুরু করেছেন। আর সেটি বলেছেনও দ্বিধাহীনভাবে, 'মাঝের সময়টায় একের পর এক ইনজুরিতে পড়েছি, কোনোকিছুই আমার পক্ষে যাচ্ছিল না। মাঠের সব কিছুই মনে হচ্ছিল কঠিন। এ কারণে ফুটবলটা তখন আর আনন্দময় ছিল না। আমি আবার ফুটবল উপভোগ করছি। এমন নয় যে, তখন খেলাটির প্রতি আমার আবেগ উবে গিয়েছিল। বরং বলা যায়, সেটি যেন কিছুটা ঘুমিয়ে ছিল। এখন আবার আমি ফুটবলে সেই আবেগ, সেই আনন্দ ফিরে পেয়েছি। মাঠ ও ফুটবলকে অনুভব করছি নিবিড়ভাবে।' মাঝের দুই বছর সময়টা যে কত কঠিন ছিল, এর স্বরূপ ফুটছে কাকার পরের কথায়, 'আমি বেশ কয়েকবার কেঁদেছি। কারণ কিভাবে যে কোত্থেকে গোলমালটা হচ্ছিল, সেটি বুঝতেই পারছিলাম না। আদর্শ অ্যাথলেটের মতো সব কিছু করেছি। ঠিকমতো ঘুমিয়েছি, যত্ন নিয়েছি নিজের। বাসায় ফেরার পর একা একা ট্রেনিং করেছি। তবুও কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।'
এই সময়টাতেই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার কথা ভাবছিলেন এ প্লে-মেকার। কেন শেষ পর্যন্ত যাননি, সেটি বলেছেন তিনি, 'গত বছর আমি রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম তুলনামূলক ছোট কোনো লিগে গিয়ে নিজেকে ফেরাতে। কিন্তু মরিনহো আমাকে বারবার আশ্বস্ত করেছেন যে রিয়ালে আমার প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি। সব সময় আমাকে খুব সাহায্য করেছেন তিনি। এ কারণেই আমি শেষ পর্যন্ত থেকে যাই।' রিয়ালের এই পর্তুগিজ কোচ সম্পর্কে কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন কাকা, 'মরিনহো সম্পর্কে আমি কেবল ভালো ভালো কথাই বলতে পারি। তিনি খুব সহজেই রিয়ালে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারতেন। বলতে পারতেন, এত দায়িত্ব যার কাঁধে সে পারফর্ম করতে পারছে না, তাই আমি ওকে বিক্রি করে নতুন কাউকে নিতে চাই। সেটি তো করেননি। বরং সব সময় আমার পাশে থেকেছেন। শান্ত থাকার ও ধৈর্য রাখার উপদেশ দিয়ে গেছেন। মরিনহোর প্রতি আমি তাই ভীষণ কৃতজ্ঞ।'
কৃতজ্ঞতা রিয়ালের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রতিও। এই দুঃসময়েও তাঁর ওপর তাঁরা আস্থা হারাননি বলে, 'গত মৌসুমে আমি শারীরিকভাবে ফিট ছিলাম না। মাঠে নিজেকে কেমন যেন রোবট রোবট মনে হচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট (ফ্লোরেন্তিনো পেরেজে) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সমস্যাটা কি? তাঁকে বলেছি, পুরো সমস্যাটাই আমার নিজের। মরিনহো ও পেরেজ আমাকে বলেছেন যে, আমাকে তাঁদের চাই। তাঁদের প্রতি আমার সীমাহীন ঋণ।'
সেই ঋণ এ মৌসুমে চড়া সুদে-আসলে শোধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কাকার খেলায়। যদি সকালের সূর্য দিনের পূর্বাভাস দেয়, তাহলে এ মৌসুমে কাকার স্বরূপে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশায় বাড়াবাড়ি নেই কোনো। ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.